সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হোলির দিন অপহরণ করে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে দুই হিন্দু নাবালিকাকে। তারপর ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের বিয়েও দিয়ে দেওয়া হয়েছে বয়সে অনেক বড় পাত্রের সঙ্গে। এমনই অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে। ওই দুই নাবালিকাকে বোনকে পাক পাঞ্জাবের রহিম ইয়ার খান অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। রবিবার এই বিষয় নিয়ে টুইটারে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বাদানুবাদেও জড়িয়ে পড়েন পাক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ফায়াদ চৌধুরি।
এই সংক্রান্ত একটি খবর টুইটারে শেয়ার করেন সুষমা। তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছেন। সুষমার এই টুইট দেখে প্রতিক্রিয়া জানান ফায়াদ। পালটা টুইট করে তিনি লেখেন, এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, নরেন্দ্র মোদি সরকারের আমলে ভারতের সংখ্যালঘুদের দমন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “এটা ইমরান খানের নয়া পাকিস্তান। আশা করি ভারতে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা নিয়েও আপনি একই রকম সরব হবেন।” ফায়াদের এই বক্রোক্তির জবাব দেন সুষমাও। ফের টুইট করে তিনি লেখেন, এই বিষয়ে শুধুমাত্র একটি রিপোর্টই তলব করা হয়েছে। কিন্তু তাতেই ভয় পেয়ে গিয়েছে পাকিস্তান।
রবিবার ইসলামাবাদে পাক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ফায়াদ হুসেন চৌধুরি জানান, সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইমরান খান। অপহৃত নাবালিকাদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থাও করতে বলেছেন তিনি। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী শাহরিয়ার খান আফ্রিদিও এই বিষয়ে সিন্ধু পুলিশের আইজির কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছেন।
[ আরও পড়ুন: ইদাইয়ের জের, আফ্রিকায় মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৭৩২ ]
পাকিস্তান সূত্রের খবর, হোলির দিন সিন্ধু প্রদেশের ঘোটকি জেলা থেকে রবিনা ও রিনা নামের দুই হিন্দু নাবালিকাকে অপহরণ করা হয়। রবিনার বয়স ১৩। রিনার ১৫। ঘটনার কিছু পরেই ওই দুই নাবালিকাকে নিয়ে একটা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায় ওই দুই বোনকেই তাদের থেকে বয়সে অনেক বড় পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর পরে আরও একটি ভিডিওতে দেখা যায় ওই দুই নাবালিকা বলছে, তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে। বিয়ে করার জন্য তাদের কেউ জোর করেনি।
ওই দুই নাবালিকার ভাই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, কিছুদিন আগেই তাঁর বাবার সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকের গন্ডগোল হয়। তার জেরেইবাড়ি থেকে ওই দুই নাবালিকাকে বন্দুক দেখিয়ে জোর করে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
এই ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সে দেশের হিন্দুরা। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে আর্জিও জানান তাঁরা। গত বছর নির্বাচনী প্রচারে ইমরান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ক্ষমতায় এলে পাকিস্তানে হিন্দু মেয়েদের জবরদস্তি বিয়ে রোখা ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
পাকিস্তান হিন্দু কাউন্সিলের প্রধান এবং সে দেশের শাসক দল তেহরিক-ই-ইনসাফের জাতীয় আইনসভার সদস্য রমেশ কুমার বাঙ্কওয়ানি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ২০১৬ সালেই জোর করে ধর্মান্তর রুখতে আইন পাস করেছিল সিন্ধু প্রাদেশিক আইনসভা। কিন্তু পরে মৌলবাদীদের চাপের মুখে সেই আইন প্রত্যাহার করা হয়। অবিলম্বে এই আইন চালু করার দাবি জানান তিনি।
একই দাবি করেন সিন্ধু প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নন্দ কুমার গোকলানিও। কিছুদিন আগেই পাকিস্তানে জবরদস্তি ধর্মান্তর রোখার জন্য একটা বিল এনেছিলেন তিনিও।
[ আরও পড়ুন: মাদক-পানীয় খাইয়ে বিমান সেবিকাকে লাগাতার ধর্ষণ, অভিযুক্ত দুই পাইলট ]
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পাকিস্তান হিন্দু সেবা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট সঞ্জেশ ধানজা জানান, পাকিস্তানে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। সিন্ধু প্রদেশে প্রায়শই এইভাবে বন্দুক দেখিয়ে হিন্দু মেয়েদের অপহরণ করে বয়স্ক পাত্রদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। ধানজা অভিযোগ করেন, এক্ষেত্রেও প্রথমে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেছিল সিন্ধের পুলিশ। পরে সেখানকার হিন্দুদের বিক্ষোভের জেরে এফআইআর দায়ের করা হয়। এই ঘটনার অভিযুক্তরা কোহবার ও মালিক উপজাতির বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানে হিন্দু জনসংখ্য প্রায় ৭৫ লক্ষ। তবে সে দেশের হিন্দুদের দাবি পাকিস্তানে অন্তত ৯০ লক্ষ হিন্দুর বাস। এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই বাস সিন্ধু প্রদেশে। পাকিস্তানে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ করে আসছেন অনেক সংগঠন।