Advertisement
Advertisement
Child cured

বিরল অসুখে কমে যাচ্ছিল বয়স! শিশুকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে নজির শহরের হাসপাতালের

১৪৪ ঘণ্টা ভেন্টিলেশনে কাটিয়ে নতুন জীবন একরত্তির।

Kolkata hospital cured Krishnanagar toddler who was suffering from rare disease | Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী

Published by: Suparna Majumder
  • Posted:November 1, 2021 1:42 pm
  • Updated:November 1, 2021 1:42 pm

অভিরূপ দাস: দু’য়ের পর তিন নয়। ফের শূন্যের দিকে হাঁটতে শুরু করেছিল অরিজিৎ। কৃষ্ণনগরের একরত্তির শরীরে বাসা বেঁধেছিল অদ্ভূত অসুখ। অশক্ত ঘাড়। বারবার তা ঝুলে পড়ে যাচ্ছিল। যেমনটা হয় সদ্যোজাতর। মা-বাবাকে সবসময় ঘাড়ের নিচে হাত রাখতে হচ্ছিল। অনবরত লালা পড়ত চিবুক বেয়ে। চমকে গিয়েছিলেন অভিভাবকরা। হামাগুড়ি দিতে দিতে সবে যখন খুদে হাঁটতে শিখছে, তখন এ কোন অসুখ? অরিজিতের বাবার কথায়, “ছেলের দু’বছর বয়স। মনে হচ্ছিল যেন দু’মাস। জন্মের পর যেমন ছিল, ধীরে ধীরে তেমনটাই হয়ে যাচ্ছিল ও।” এই অবস্থা থেকেই শিশুকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিল শহরের বেসরকারি হাসপাতাল।

মাসদু’য়েক আগের ঘটনা। প্রথমটায় কৃষ্ণনগরের স্থানীয় এক হাসপাতালের নিয়ে যাওয়া হয় অরিজিৎকে। সেখান থেকে কলকাতার বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতাল। শারীরিক অবস্থা আরও সংকটজনক হয়ে পড়ায় শিশুটিকে অবশেষে আনা হয় কলকাতার ফর্টিস হাসপাতালে। সেসময় খিঁচুনির চোটে উঠে বসতে পারে না সে। বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুমিতা সাহা জানিয়েছেন, এখানে শারীরিক পরীক্ষা করে বুঝতে পারি ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাস আক্রমণ করেছে শিশুটিকে। ঋতু পরিবর্তনের সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আক্রমণ অত্যন্ত স্বাভাবিক। একশো জন ফ্লু আক্রান্তের মধ্যে ৭৫ শতাংশই ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এবং বাকি ২৫ শতাংশের ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

Advertisement

Child of Krishnanagar

Advertisement

[আরও পড়ুন: কালীপুজোর আগে মহানগরে উদ্ধার আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেপ্তার দৃষ্কৃতী]

সাধারণত যে কোনও ঋতু পরিবর্তনের শুরুতে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। অন্য দিকে সেই ঋতুর শেষ দিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাস খুব বিরল নয়। কিন্তু তার আক্রমণে শিশুর শরীরে যে অসুখ দেখা দিয়েছিল, তা অতি বিরল। চিকিৎসা পরিভাষায় এ অসুখের নাম অ্যাডেম অথবা অ্যাকিউট ডিসেমিনেটেস এনসেফেলোমাইলাইটিস। তবে এই অরিজিতের শরীরে যা হয়েছিল, তা আরও জটিল। সাধারণ অ্যাডেম-এর তুলনায় আরও ভয়াবহ।

অ্যাকিউট হেমারেজিক নেক্রোটাইজিং এনসেফেমাইলাইটিস-এ আক্রান্ত হয়েছিল কৃষ্ণনগরের খুদে। রক্তে ক্রমশ কমছিল অক্সিজেনের মাত্রা। এক সময় তা পৌঁছে যায় ৬০ শতাংশে। দ্রুত ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় অরিজিৎকে। টানা ১৪৪ ঘণ্টা ভেন্টিলেশনে ছিল সে। মস্তিষ্কের এমআরআই করে দেখা যায় গ্রে ম্যাটার ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে। ডা. সাহা জানিয়েছেন, এই কারণে বৌদ্ধিক বিকাশ কমছিল ওই শিশুর। কমছিল রক্তচাপ। 

পরিস্থিতি দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেন ফর্টিসের চিকিৎসকরা। ভেন্টিলেশনের পাশাপাশি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখারও ব্যবস্থা করা হয়। ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইঞ্জেকশন দিয়ে শুরু হয় চিকিৎসা। দেওয়া হয় স্টেরয়েড। সাতদিন আচ্ছন্ন অবস্থায় ছিল অরিজিৎ। সাতদিন পর যখন ঘুম ভেঙে ওঠে, তখন যেন মাস দু’য়েকের শিশু। দু’বছর ধরে বাড়ির লোক শিখিয়েছিল কীভাবে খেতে হয়। তা সে ভুলেই গিয়েছে। খাবার খেতে গিয়ে মুখ দিয়ে পড়ে যাচ্ছে। ফের ১ মাস ধরে তিল তিল করে তাকে শেখানো হয় খাবার গেলার কৌশল। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

চিকিৎসক সুমিতা সাহা জানিয়েছেন, ফাঁড়া কেটে গিয়েছে। এবার ধীরে ধীরে অরিজিৎকে কথা বলতেও শেখানো যাবে। শীত পড়ছে রাজ্যে। ঋতু পরিবর্তনের এই সময় সাবধান থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা। কোভিড (COVID-19) আবহে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিয়েও সতর্ক হতে বলা হয়েছে। ডা. সাহার কথায়, ফ্লু ও কোভিড, দু’টিই শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতায় পরিণত হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু অত্যন্ত ভাইরাল সংক্রমণ। সম্প্রতি, ফ্লু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে এরকম অটো ইমিউন ডিজিজ হতে পারে। তাই করোনা টিকা নেওয়ার পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিয়ে ফেলা দরকার।

[আরও পড়ুন: উত্তুরে হাওয়ার প্রবেশ রাজ্যে, কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নামল ২০ ডিগ্রিতে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ