স্টাফ রিপোর্টার: তিনদিন পুলিশ হেফাজতের পর সোমবার ফের আদালতে তোলা হচ্ছে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়কে। পুলিশ সূত্রে খবর, মূলত অভিনেতার বয়ান বিভ্রান্তি ও ঘটনার পুনর্গঠন সম্পূর্ণ না হওয়ার জন্যই ফের তাঁকে হেফাজতে চাইতে পারে পুলিশ। কারণ তিনদিন পুলিশ হেফাজতে থাকলেও বেশিরভাগ প্রশ্নই হয় এড়িয়ে গিয়েছেন, না হলে বিভ্রান্তিকর উত্তর দিয়েছেন। যার ফলে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে পুলিশকে। কারণ পুলিশের হাতে থাকা মেডিক্যাল রিপোর্ট, গাড়ির ফরেন্সিক রিপোর্টের সঙ্গে বিক্রমের বয়ানের একাধিক অসংগতি রয়েছে। আজ সকালেও ঘণ্টা দু’য়েক জেরা করা হয়েছে বিক্রমকে।
কেন বিক্রমের বয়ান অসঙ্গতিতে পরিপূর্ণ? পুলিশ জানাচ্ছে, ব্রেকের উপর থেকে পা তুলে নেওয়া প্রসঙ্গে বিক্রম জানিয়েছেন, গাড়ি চালানোর সময় তিনি জুতো খুলে রেখেছিলেন। তাই ব্রেক থেকে পা পিছলে গিয়েছিল। কখনও আবার এও বলেছেন, দুর্ঘটনার মুখে পড়ে তিনি হতবুদ্ধি হয়ে যান। তাই খেয়ালই নেই, কখন কী করেছেন। আবার গাড়ির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তদন্তকারীদের বিক্রম জানিয়েছেন, তাঁর গাড়ির গতি একটু বেশি থাকলেও কসবা থেকে লেক মার্কেট পর্যন্ত স্টিয়ারিং তাঁর বশেই ছিল। লেক মার্কেটের শপিং মলের কাছে আসতেই আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। গাড়ি ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে ফুটপাথের দিকে চলে আসে। একটি দোকানের দেওয়ালে ধাক্কা মেরে গাড়ির পিছনের অংশ আছড়ে পড়ে ফুটপাথের উপর বেদিতে। যদিও গাড়ির ফরেন্সিক রিপোর্ট ও গাড়ির ক্র্যাশ ডেটা রিট্রিভাল বা ‘সিডিআর’—এ তথ্য অনুযায়ী ১.৬ সেকেন্ড আগে কোনও ব্রেক কষা হয়নি। এই অবস্থায় তদন্তকারীদের প্রশ্ন, তাহলে কীভাবে বিক্রম দাবি করছেন তার নিয়ন্ত্রণেই ছিল গাড়ি। তদন্তকারীরা জানতে চাইছেন কী এমন ঘটল, যাতে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন বিক্রম। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, দুর্ঘটনার আগে গাড়ির গতি ছিল ১০৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, এই গতি কি কসবা থেকে গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার সময় থেকেই তুলেছিলেন বিক্রম?
যদিও বিক্রম জানিয়েছেন, সেদিন দেশপ্রিয় পার্কের কাছে এসে গাড়ির গতি বাড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেন? কী এমন ঘটেছিল যাতে এত গতিতে গাড়ি ছোটাতে হল? আবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, দুর্ঘটনার পর এম আর বাঙুর ও এসএসকেএম হাসপাতাল থাকতেও কেন দূরের রুবিকে বেছে নিয়েছিলেন বিক্রম। এই প্রশ্নের উত্তরে বিক্রম জানিয়েছেন, সোনিকাকে ভাল চিকিৎসা দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত। আবার কখনও তিনি বলেছেন, মাথা কাজ করেনি। ট্যাক্সি চালক যেখানে নিয়ে গিয়েছিল সেখানেই নিয়ে যাই সোনিকাকে। অন্যদিকে, এখনও অবধি কসবার সুইনহো স্ট্রিটে গাড়ি থামিয়ে বিক্রম ও সনিকার মধ্যে কী কথা হয়েছিল তা নিয়েও ধন্দে পুলিশ। সেই বিষয় নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলেননি বিক্রম। তাঁদের মধ্যে কোনও বচসা হয়েছিল কি না তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। পুলিশের দাবি, ঘটনাটি ‘ডেলিবারেট অ্যাক্ট’। পাশাপাশি বিক্রমের বক্তব্য অসংগতিতে পরিপূর্ণ। এই অসংগতিগুলি কাটাতে পুলিশ চেষ্টা করে বিক্রমকে নিয়ে ঘটনাটির পুনর্গঠন করতে। যদিও রবিবার রাত পর্যন্ত কিছু সমস্যার জন্য তা করা সম্ভব হয়নি। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, তাদের কাছে যে প্রমাণ রয়েছে, তাতে ঘটনাস্থলে না নিয়ে গিয়েও পুনর্গঠন সম্ভব। প্রসঙ্গত, ২৯ এপ্রিলের ভোররাতে দুর্ঘটনার আগে মদ্যপানের কথা স্বীকার করেছেন বিক্রম। স্বীকার করেছেন একাধিক পার্টিতে অতিরিক্ত মদ্যপান কথা। তবে যেহেতু জেরায় বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি, তাই ফের বিক্রমকে জেরা করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। তবে সিনেমা, সিরিয়ালের বাইরে বাস্তব জীবনেও যে বিক্রম পটু অভিনেতা তা মানছে পুলিশের একাংশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.