Advertisement
Advertisement
তৃণমূল

গেরুয়া ঝড়ে খাস কলকাতাতেই কুপোকাত তৃণমূলের মন্ত্রী-বিধায়করা

মুখ্যমন্ত্রীর নিজের ওয়ার্ডে তৃণমূল হারল ৪৯৬ ভোটে৷

TMC trails in the wards and assembly constitiuecies in Kolkata
Published by: Sayani Sen
  • Posted:May 25, 2019 4:37 pm
  • Updated:May 25, 2019 4:37 pm  

কৃষ্ণকুমার দাস: মোদি ঝড়ে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ওয়ার্ডের ভোটার সেই ৭৩ নম্বরেও হেরে গেল তৃণমূল কংগ্রেস। জোড়া ফুলের গর্ভগৃহ দক্ষিণ কলকাতার হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের রতন মালাকার আবার বরো চেয়ারম্যানও। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ওয়ার্ডে ৪৯৬ ভোটে হেরে গিয়েছেন মমতার প্রার্থী মালা রায়। শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন, হেরে গিয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস৷ এক সময় যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন সেই ৮১ নম্বর ওয়ার্ডও। সেখানে এখন কাউন্সিলর অরূপের ভাই স্বরূপ বিশ্বাসের স্ত্রী জুঁই। এই ওয়ার্ডে শাসকদল তৃণমূল ৩৩৪৪ ভোটে হেরে গিয়েছে। কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও দুই মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও শশী পাঁজার বিধানসভা কেন্দ্রে হেরেছে তৃণমূল। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, জাভেদ খানের বিধানসভা কেন্দ্রেও একাধিক ওয়ার্ডে হেরেছে তৃণমূল। আবার বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএম হেরে তৃতীয় হয়েছে। প্রায় ১২ হাজার ভোটে যাদবপুরে জিতেছেন তৃণমূলের মিমি চক্রবর্তী। টালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল জিতেছে ২২ হাজারের বেশি ভোটে। গত বিধানসভা ভোটে যাদবপুরে তৃণমূল হারলেও এবার বামের ভোট রামে চলে যাওয়ায় সিপিএম প্রার্থী তৃতীয় হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন স্বয়ং সুজন চক্রবর্তী। 

[ আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতেই পদ্ম ফেরি পার্ক সার্কাসের মোদি ভক্ত ইয়াকুবের]

লোকসভা ভোটে কলকাতায় হেরে যাওয়া ৬৫টি ওয়ার্ডে দলীয় সংগঠনের পাশাপাশি পুর-পরিষেবা নিয়ে জনতার ক্ষোভ জানতে এবার বাড়তি নজর দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। এর মধ্যে উত্তর কলকাতার ২৫ টি এবং দক্ষিণ কলকাতার ২৬টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের কাউন্সিলররা হেরেছেন। বিরোধী কাউন্সিলররা রয়েছেন এমন ১৪টি ওয়ার্ডেও জোড়াফুলের প্রার্থীরা হেরে গিয়েছেন। ভোটে পাঁচ মেয়র পারিষদ ও চার বরো চেয়ারম্যানের ওয়ার্ডেও বিজেপির কাছে হেরে গিয়েছে তৃণমূল। তবে ১৪৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে এই ৬৫টিতে হারের ঘাটতি মিটিয়ে অবশিষ্ট ৭৯টি ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালা রায়। যাদবপুর ও টালিগঞ্জ বিধানসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকেও জয়ের পথে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে তৃণমূল প্রার্থী মিমি চক্রবর্তীকে। স্বভাবতই আগামী বছর পুরভোটের আগে হেরে যাওয়া ওয়ার্ডগুলিতেও এবার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছতে নেমে পড়ছে শাসকদল তৃণমূল। অন্যদিকে, দলীয় প্রার্থীদের জেতা কলকাতার এই ৬৫টি ওয়ার্ডের পাশাপাশি কম মার্জিনে হারা ওয়ার্ডগুলি নিয়ে পুরভোটের পালটা প্রস্তুতি শুরু করছে গেরুয়া শিবিরও। উত্তরের প্রার্থী হেরেছেন স্মিতা বক্সির জোড়াসাঁকো কেন্দ্রেও। হেরে যাওয়া ওয়ার্ডগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটিতে আবার বিজেপি ও বাম কাউন্সিলররা রয়েছেন। কলকাতার মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “উন্নয়নের ইস্যুতে এবার ভোট হয়নি। ধর্মের নামে ভোট করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে বিজেপি সুবিধা নিয়েছে। পুরভোটের আগে মানুষের বক্তব্য জানতে এই ৬৫ ওয়ার্ডে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।” তবে মধ্যবিত্ত ভোটারদের মধ্যে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ও সংখ্যালঘুদের জন্যই শুধুমাত্র রাজ্য সরকার কাজ করে এই অপপ্রচার প্রভাব ফেলেছে বলে স্বীকার করেন মেয়র।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: বাংলায় ভরাডুবি, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ওয়ার্ডেও এগিয়ে পদ্মশিবির!]

লোকসভা ভোটে গতবারের চেয়ে এবার বেশি মার্জিনে জিতেছেন কলকাতার দুই তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মালা রায়। কিন্তু মার্জিন বাড়লেও উত্তরের ২৫ এবং দক্ষিণ কলকাতার ২৬টি ওয়ার্ডে জোড়াফুলের হার চিন্তায় ফেলে দিয়েছে কাউন্সিলরদের। কারণ, এই ৫১টি ওয়ার্ডেই জিতেছেন বিজেপির প্রার্থী। উত্তরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারের ওয়ার্ড ৫৮ নম্বর যেমন হেরেছে, তেমনই দক্ষিণের তিন মেয়র পারিষদ হেরেছেন। দেবাশিস কুমারের ৮৫ নম্বরে ১৯৩২, রতন দে’র ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬৭৬ এবং তারক সিংয়ের ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৫২ ভোটের ব্যবধানে মালা রায় হেরেছেন। তারকের ছেলে অমিত ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩৪২ ও মেয়ে কৃষ্ণা সিং ১১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৮২ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন তৃণমূল প্রার্থী। এছাড়া ভবানীপুরে ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৭০১, ৭১ নম্বরে ১৯৩০, ৭২ নম্বরে ২০৯৩, ৭৩ নম্বরে ৪৯৬, ৭৪ নম্বরে ৪,৬৩০ ভোটের ব্যবধানে জোড়াফুল বিজেপি প্রার্থীর চেয়ে পিছিয়ে ছিল। দক্ষিণের দুই বরো চেয়ারম্যান সন্দীপ বক্সি ও রতন মালাকারের ওয়ার্ডেও হেরেছে তৃণমূল। কসবার বরো চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষের ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৭৯৯ এবং কাউন্সিলর শ্যামল জানার ওয়ার্ডে ৩,৯৭৫ হেরেছে তৃণমূল। মেয়র পারিষদ রাম প্যারে রামের ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডেও ৪৬৮১ ভোটের মার্জিনে হেরেছেন দলীয় প্রার্থী মালা রায়। স্বয়ং মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে তিন মাসে ভোট কমেছে ১৩ হাজার। উপনির্বাচনে ১৪ হাজারের ব্যবধানে জেতা ওয়ার্ডের মার্জিন হয়েছে মাত্র ১১০০। অবাক স্বয়ং মেয়রও।

[ আরও পড়ুন: জুনেই বিজয়োৎসব বিজেপির, কলকাতায় সাফল্যসভায় মধ্যমণি হবেন শাহ]

উত্তর কলকাতার প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৯৫ ভোটে জিতলেও হেরেছেন জোড়াসাঁকো ও শ্যামপুকুরে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, জোড়াসাঁকোতে ৩,৮৮২ এবং শ্যামপুকুরে ২,১৭০ ভোটের মার্জিনে হেরে গিয়েছে তৃণমূল। এর মধ্যে জোড়াসাঁকোর আটটি ওয়ার্ডে হেরেছেন সুদীপবাবু। চৌরঙ্গি বিধানসভায় ২৬,৫৬০ ভোটে জিতলেও হেরেছেন ৪৫, ৪৭, ৫০, ৫১, ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে। বেলেঘাটার ৫৫ ও ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডে হেরে গিয়েছে জোড়াফুল। মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে মানিকতলা কেন্দ্রে তিনটি ওয়ার্ড ১১, ১৪, ৩২ নম্বরে জিতেছেন সুদীপবাবু। এর মধ্যে ১১ নম্বর ওয়ার্ড ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের, তৃণমূল জিতেছে ১০৩১ ভোটের মার্জিনে। তবে মানিকতলার ১২, ১৩, ১৫, ১৬ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে হার হয়েছে শাসকদলের। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডটি বরো চেয়ারম্যান অনিন্দ্য রাউতের। ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলের প্রার্থীদের মোদির দলের কাছে বিরোধী বাম ও বিজেপি কাউন্সিলর আছেন এমন ওয়ার্ডেও হেরেছে শাসক দল তৃণমূল। কোথাও আবার বাম কাউন্সিলরও হেরে গিয়েছেন বিজেপির বাক্সে নিজেদের ভোট চলে যাওয়ায়। দক্ষিণের দাপুটে বাম কাউন্সিলর ১০২ নম্বরে রিঙ্কু নস্করের ওয়ার্ডে ৭১৫ এবং ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে নন্দিতা রায়ের ওয়ার্ডে ৯০ ভোটে হেরেছে তৃণমূল। টালিগঞ্জের বাম কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী ১৭০০ ভোটে হেরে গিয়েছে মিমি চক্রবর্তী। কিন্তু আবার উলটোও হয়েছে সিপিএম কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্যর ওয়ার্ডে এবছর ৬০০ ভোটে তৃণমূল জিতেছে। উত্তরে মীনা দেবী পুরোহিত-সহ সমস্ত বিজেপি কাউন্সিলরের ওয়ার্ডইে বিপুল ভোটে জিতেছেন পদ্ম প্রতীকের প্রার্থী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement