কলহার মুখোপাধ্যায়: বিরিয়ানি তো অনেকেই খাওয়ান। নামী শেফের হাতে আওয়াধি থেকে হায়দরাবাদি বিরিয়ানি যাত্রায় বাঙালি কম যায় না। তবে সাড়ে পাঁচ বছরের একটি শিশু যখন বিরিয়ানি বানায়, সেটা খেতে কেমন হয়? অপটু পদ্ধতিতে, নড়বড় করতে করতে, ছোট ছোট হাতে বানানো চিকেন বিরিয়ানি কেমন খেতে? গিনেস বুকের রেকর্ডের গল্প হচ্ছে বুঝি? আচ্ছা পানিপুরি আইসক্রিম খেতে কেমন? মানে ভ্যানিলা স্কুপের সঙ্গে পানিপুরি মশলা মিশিয়ে তাতে তেঁতুল জল দিলে কেমন খেতে হয়? ওর উপর থেকে ফুচকা ভেঙে গুঁড়িয়ে ছড়িয়েও দেওয়া হয়েছিল। আশ্চর্য হতেই হবে, যখন শুনবেন, রেসিপিটা যার মস্তিষ্কপ্রসূত তার বয়স ১০ বছর। শুধু তাই নয় সে নিজে হাতে সেটা বানিয়েছে।
তাক লেগে যাচ্ছে? গিনেসের কথা হচ্ছে না। হচ্ছে আসলে ‘কিডস ফুড ফেস্টিভ্যাল’–এর কথা। সল্টলেকের এজে ব্লকে এই খাদ্য উৎসব ছিল। অংশ নিয়েছিল গোটা বিশেক খুদে। সবথেকে ছোটটি তাতান। সবে চারবছর পেরিয়েছে। সে ‘মুজ’ বানিয়েছে। আর বানানোর সময় মাকে বারবার বলেছে, আমি একটু খাব? ও অবশ্য খায়নি। জাস্ট টেস্ট করেছে। তবে ওই মুজ খেয়ে ধন্য ধন্য করেছে গোটা মেলা। একই কাড়াকাড়ি পড়েছে যুধাজিৎ চক্রবর্তীর পানিপুরি আইসক্রিম নিয়ে। আর মারমার কাটকাট অবস্থা রাত্রি করের বিরিয়ানি নিয়ে। ওরা যেহেতু ছোট তাই নামটাও রাখা হয়েছিল ছোটর মধ্যে। সব খাবারের দাম ছিল ১০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। আর কী কী ছিল মেনুতে? ‘ক্রিমি স্যান্ডউইচ’, ‘সুইট কর্ন’, ‘টক ঝাল মিষ্টি’, ‘ঝাল মুড়ি’, ‘ভ্যানিলা বোনানজা’, ‘এগ স্কোয়্যার’, ‘চিকেন ঘুঘনি’, ‘দই ফুচকা’ ইত্যাদি। আর অচিরেই যারা দুনিয়া কাঁপানোর স্বপ্ন দেখছে সেই পুঁচকে রাঁধুনিদের নাম? অম্বালি কর, সম্প্রীতি সাহা, উজ্জ্বেশা বর্মন, সুপ্রিয়, স্বর্ণালি, রিমঝিম, তপস্বীর সঙ্গে আরও অনেকে। হাতে গুনে ২০ জন।
[আরো পড়ুন : গরম আসার আগেই জেনে নিন রকমারি শরবতের রেসিপি]
এজে ব্লক কমিটি এই পুরো যজ্ঞটার আয়োজন করেছে। আয়োজনটা সংগঠিত করেছে মৈনাক। আর গোটা বিষয়টা যাঁর মাথা থেকে বেরিয়েছে, তিনি সদ্য মুম্বই থেকে এসেছেন ব্লকের বাসিন্দা হিসাবে। তাঁর নাম পাপিয়া চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, “ছেলেকে দেখি সারাক্ষণ মোবাইল ঘাঁটছে। ওর বন্ধুরাও তাই। হয় টিভি নয় মোবাইল। নতুন কিছু করুক, এই ভাবনাতে ফুড ফেস্টিভ্যালের কথা মাথায় এল।” আর যাদের নিয়ে এত কাণ্ড তাদের নাকি উৎসাহের শেষ নেই। পাপিয়াদেবী জানিয়েছেন, “বলার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে একবাক্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ওরা।” অভিভাবকরা আলাপ আলোচনায় বলছেন, সকাল থেকেই বাড়িতে সাজ সাজ রব। দুপুরের খাবার করতে দিচ্ছিল না বাচ্চারা। এদিন নাকি রান্নাঘর ওদের ছেড়ে দিতে হবে। তা হয়েছেও সেটা। রান্নাঘরে কাউকে ঢুকতেই দিচ্ছিল না।
[আরো পড়ুন : দোলে মাতুন নয়া মিঠাইয়ে, স্বাদ বাড়াতে খান বম্বে আইস হালুয়া]
তা শোনা যাচ্ছে বিক্রিবাটা ভালই হয়েছে। ব্লকের বাসিন্দারা চেটেপুটে খেয়েছেন। কোনও খাবারই পড়ে থাকেনি। আর লাভের টাকা? তা নাকি পিগি ব্যাঙ্কে ঢুকে গিয়েছে। কোনও অভিভাবকই তার ভাগ পাননি। দুঃখ শুধু একটাই, ডিমান্ড এত ছিল যে, নিজেদের রান্না নিজেরা খাওয়ার সুযোগই পায়নি পাঁচকেগুলো। ওরা শুধু টেস্ট করেছে রান্নার সময়। তা পরেরবার পুরো এক প্লেট করে আগে নিজেরা খাবে, তারপর বিক্রি করবে। এই শর্ত হয়েছে বড়দের সঙ্গে।