৮ আশ্বিন  ১৪৩০  মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন দিশা দেখাচ্ছে ‘প্রোটন বিম থেরাপি’, কী এই বিশেষ পদ্ধতি?

Published by: Suparna Majumder |    Posted: April 18, 2023 2:51 pm|    Updated: April 18, 2023 2:51 pm

Proton Beam Therapy in Cancer treatment | Sangbad Pratidin

 সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:  ক্যানসার (Cancer), এই অসুখের সঙ্গে শুধু রোগীর নয়, পুরো পরিবারের লড়াই চলে। অজস্র ওষুধ, বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি আর ক্যানসারের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার জাঁতাকলে এই মৃত্যুমুখী রোগীদের শেষ সঙ্গী অসহায়তা। কোন চিকিৎসা পদ্ধতি সুরাহা দিতে পারে, কোন পথে যাওয়া ঠিক সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো মানসিকতা প্রায় কারওরই থাকে না। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। আসলে যত দিন যাচ্ছে এখন ক্যানসার চিকিৎসায় নিত্য নতুন নানা প্রযুক্তি আসছে। সে রকমই একটি আধুনিক চিকিৎসা করা হচ্ছে চেন্নাই অ্যাপোলো হাসপাতালে। নাম ‘প্রোটন বিম থেরাপি’ (Proton Beam Therapy)।

Proton-Beam-Therapy-1

সম্প্রতি ১১ বছরের একটি শিশু, হায়দরাবাদের বাসিন্দা। ব্রেন টিউমার আক্রান্ত ছিল, এই অত্যাধুনিক চিকিৎসায় এখন টিউমার গায়েব। শুনতে যতটা সহজ, ট্রিটমেন্ট ততটা সহজ নয় ঠিকই, তবে অনেকটাই আশাব্যঞ্জক। হায়দরাবাদের এই শিশুটির প্রায় এক মাস ধরে প্রোটন থেরাপি করা হয়েছে। শুধু শিশুটিই নয়, এমন রোগীর সংখ্যা চেন্নাই অ্যাপোলোতে অনেক। শুধু দেশের মধ্যেই নয়, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য দেশ থেকে এখানে রোগীরা আসছেন প্রোটন থেরাপি করাতে। কী এই বিশেষ পদ্ধতি?

প্রোটন থেরাপি কেন ভাল?
প্রোটন থেরাপি বা প্রোটন বিম থেরাপি এক প্রকার রেডিয়েশন ট্রিটমেন্ট। তবে সাধারণ রেডিয়েশনের চেয়ে উচ্চমানের। এই থেরাপির দ্বারা টিউমার পুরোপুরি শিকড় থেকে নির্মূল করা সম্ভব। সাধারণ রেডিয়েশনের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, প্রোটন থেরাপির দ্বারা আরও বেশি করে টার্গেট স্থির করে থেরাপি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। অর্থাৎ আরও নির্দিষ্ট করে শুধুমাত্র ক্যানসার সেলেই এই থেরাপি প্রয়োগ করা সম্ভব। ফলে আক্রান্ত জায়গায় পুরো এনার্জি পৌঁছতে পারে এবং দ্রুত কাজ হয়। এই থেরাপি ক্যানসার কোষের বা টিউমারের ডিএনএ পুরোপুরি নষ্ট করে দেয় সঙ্গে আশেপাশে আরও হেলদি টিস্যু তৈরিতে সাহায্য করে। আর টিউমার কোষকে এমনভাবে নষ্ট করে যে তা পুনরায় নিজ থেকে ঠিক হয়ে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে না। ফলত রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

উলটোদিকে, সাধারণ রেডিয়েশন হল এক প্রকার এক্স-রে বা হাই এনার্জি বা মেগা ফোল্টেজ এক্সরে। ফলত, এই উচ্চমাত্রায় রে যখন শরীরে প্রবেশ করে তখন ক্যানসার সেলের সঙ্গে সারা শরীরের তার প্রভাব ফেলে। অন্যান্য হেলদি অঙ্গ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু প্রোটন হল পজিটিভ এনার্জি পার্টিকেলস। এই বৈশিষ্ট্য থাকার জন্য প্রোটন শরীরে প্রবেশ করার পর একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ক্যানসার সেলের বাইরে অন্যান্য অঙ্গ
তাই এর দরুন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। সাইড এফেক্ট খুবই কম।

[আরএ পড়ুন: নারদ মামলা: তদন্ত শেষ করেনি CBI, FIR থেকে নাম বাদের আরজি নিয়ে হাই কোর্টে TMC সাংসদ]

কোন ক্যানসারে সুরাহা?
দেখা গিয়েছে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে যে যে ক্যানসারে প্রোটন বিম থেরাপি সাড়া ফেলেছে তা হল, শিশুদের ক্যানসার বা পেডিয়াট্রিক টিউমার, ব্রেন টিউমার, স্পাইন্যাল টিউমার, স্কাল বা করোটিতে টিউমার আর যাদের একাধিকবার ক্যানসার বা টিউমার ফিরে এসেছে এবং একবার সাধারণ রেডিয়েশন দিয়ে কাজ না হলে সে সব ক্ষেত্রে প্রোটন থেরাপি কার্যকর।
আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে যখন সার্জারি বা সাধারণ রেডিয়েশন দেওয়া যায় না তখনও এই প্রোটন থেরাপি দেওয়া হয়। যেমন, করোটিতে টিউমারের ক্ষেত্রে।

এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে যে ধরনের ক্যানসারগুলো আজকাল বেশি দেখা যাচ্ছে, সে সব ক্ষেত্রেও প্রোটন থেরাপির দ্বারা চিকিৎসা করা হচ্ছে। যেমন, প্রস্টেট ক্যানসার, কিছু ধরনের স্তন ও ফুসফুস ক্যানসার, হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার, কিছু ধরনের লিভার ক্যানসার, প্যাংক্রিয়াটিস ক্যানসার, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার, সার্ভাইক্যাল ক্যানসার এমন কী কিছু ধরনের চোখের ক্যানসারেও কার্যকর।

Proton-Beam-Therapy-2

কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে
যেহেতু এই প্রোটন থেরাপির জন্য খুব উচ্চমানের পরিকাঠামো দরকার তাই এদেশে প্রায় কোনও হাসপাতালেই এখনও এই চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আরও একটা ব্যাপার হল, ক্যানসারের ধরন, কোন স্টেজ এই সব বিচার করে তবেই এই থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। যে যে ক্ষেত্রে সাধারণ রেডিয়েশনেই কাজ হয়, সে ক্ষেত্রে প্রোটন থেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সেটা চিকিৎসকরা অনেক কিছু দেখে তবেই বিবেচনা করেন। এই চিকিৎসার খরচও রয়েছে। তবে যখন সব ট্রিটমেন্টই প্রায় নিরাশ করে, তখন কিন্তু প্রয়োজনে প্রোটন থেরাপি মিরাকল ঘটাতে পারে।

বিশ্বজুড়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে, তবুও ক্যানসারকে পুরোপুরি করায়ত্ত করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে নতুন কিছু পথের সন্ধান পেলে যেন হালে পানি পাওয়া যায়। ক্যানসারের চিকিৎসায় এমনই এক আশ্বাসের কথা বললেন চেন্নাই অ্যাপোলোর প্রোটন সেন্টারের রেডিয়েশন অঙ্কোলজিস্ট ডা. শ্রীনিবাস চিলুকুরি।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, আজকের দিনে ক্যানসার চিকিৎসায় প্রোটন থেরাপি নিঃসন্দেহে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। বিশেষ করে, শিশুদের ক্যানসার ও মাথার খুলির ক্যানসারের চিকিৎসায় যে সব সীমাবদ্ধতা ছিল, ফলে নানা রকমের চিকিৎসা করেও অনেক ক্ষেত্রেই আমরা সফল হতে পারি না। সেগুলি প্রোটন থেরাপির দৌলতে চিকিৎসা করা এখন অনেকটাই সহজ হয়েছে। তবে প্রোটন থেরাপি এখন খরচসাপেক্ষ, তাই অনেকেরই নাগালের বাইরে। ভবিষ্যতে আরও অনেক প্রোটন থেরাপি সেন্টারের সূচনা হলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি উপকৃত হয়। খরচও আয়ত্তে আসবে তাহলে।

[আরএ পড়ুন: AI ব্যবহারের ফল, এবার পর্ন ছবিতে দেখা যেতে পারে আপনার মুখও! আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে