শেষ জীবন সংগ্রাম। ইহলোকের মায়া ছেড়ে অমৃতলোকের পথে হীরাবেন মোদি। শোকবিধ্বস্ত প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গান্ধীনগরের সেক্টর ৩০ মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তাঁর।
ছোট থেকেই বেশ কষ্টে কেটেছে হীরাবেনের জীবন। একেবারে ছোটবেলায় নিজের মা-বাবাকে হারান তিনি। কৈশোর কাটে মামাবাড়িতে। দিদার কাছে বড় হন। অল্প বয়সেই দামোদরদাসের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তাতেও সুখের মুখ দেখেননি হীরাবেন। প্রবল অর্থকষ্ট দূর করতে বাসন মাজা এমনকী তুলোর কারখানাতেও কাজ নেন হীরাবেন।
ধীরে ধীরে পরিবার বাড়তে থাকে। একে একে পাঁচ পুত্রসন্তান এবং একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন হীরাবেন। অর্থের অভাবে নিজে বেশিদূর পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারেননি। তবে সন্তানরা পড়াশোনা করুক, চাইতেন তিনি। পুঁথিগত শিক্ষার আগে তিনি চাইতেন নিজের মতোই শৃঙ্খলাবদ্ধ হোক সন্তানরাও।
শাসন নয়। পরিবর্তে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সন্তানদের সুশিক্ষা দিতেন হীরাবেন। মোদির ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা যেন তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। ছোটবেলায় একদিন একটি কুমিরছানা সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যান মোদি। স্কুলশিক্ষক দেখে ভয় পান। পুকুর ফেলে দিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু মোদি কিছুতেই কুমিরছানাটিকে হাতছাড়া করবেন না। কুমিরছানা নিয়ে বাড়িও চলে আসেন। হীরাবেন বোঝান মোদি অজান্তেই কুমিরছানাকে তার পরিবারের থেকে আলাদা করে ফেলেছেন। মানসিক অবস্থার কথা ভেবে তড়িঘড়ি কুমিরছানাটিকে নিজের জায়গায় ফেরত দিয়ে আসেন মোদি।
অত্যন্ত শৌখিন ছিলেন হীরাবেন। একটা সময় মাটির বাড়িতে থাকতেন তিনি। গোবর এবং মাটির সাহায্যে প্রতি বছর নিজে হাতে বাড়ি সারাইয়ের কাজ করতেন। অনেক সময় দেওয়ালে নানা নকশাও করতেন। যা ভীষণ পছন্দ ছিল ছোট্ট মোদির। ভজনের প্রতি অতি টান ছিল তাঁর। গুজরাটি ভজন শিল্পী নরসিং মেহতা, জাভেরচন্দ মেঘানিই ছিল প্রথম পছন্দ।
প্রকৃত অর্থে একজন সচেতন নাগরিক ছিলেন হীরাবেন। পঞ্চায়েত হোক কিংবা লোকসভা নির্বাচন, প্রত্যেক ভোটাভুটিতে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতেন তিনি।
প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর মায়ের থেকে আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলেন মোদি। সেই সময় ছেলেকে বলেছিলেন, "কখনও কোনও দুর্নীতিতে জড়াবে না।"
দ্বিতীয়বার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হীরাবেন। তবে বাড়তি কোনও সুবিধা নেননি তিনি। এমনকী বসেনি আলাদা কোনও জায়গায়। পরিবর্তে ভিড়ের মাঝে সকলের সঙ্গে বসেছিলেন হীরাবেন।
মায়ের থেকে দূরে থাকলেও প্রতিবার জন্মদিনের আগে কিংবা দীপাবলিতে হীরাবেনের কাছে যেতেন। পা ধুঁয়ে মায়ের আশীর্বাদ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার টুইটে মায়ের মৃত্যুসংবাদ দেন মোদি। তিনি লেখেন, “ঈশ্বরের চরণে বিশ্রাম করছে একটা উজ্জ্বল শতবর্ষ। মায়ের মধ্যে আমি সবসময় এক তপস্বীর যাত্রা, নিঃস্বার্থ কর্মযোগী এবং মূল্যবোধের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জীবন অনুভব করেছি।”
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.