সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুধু ছায়া, হাওয়া আর অক্সিজেন দিয়েই কি পরিবেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করে বৃক্ষরাজি? উত্তরটা – না। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, তার কর্মক্ষমতা আরও অনেক বেশি, যা আমাদের সেভাবে চোখে পড়ে না। অথচ জলদূষণ, বায়ুদূষণ, মাটিদূষণ রোধের মতো শব্দদূষণ রুখে দিতেও সক্ষম গাছ। দেবদারু প্রজাতির গাছ কৃত্রিম শব্দ শুষে নিয়ে পরিবেশকে অনেকটা সুস্থ রাখতে পারে। তীব্র থেকে তীব্রতর শব্দও বাধা পড়ে গাছের পাতার আড়ালে। তাই গবেষকদের পরামর্শ, শহর সাজানোর পরিকল্পনায় দেবদারু গাছ থাকা অবশ্য প্রয়োজনীয়।
সূক্ষ্ণতম শব্দ থেকে তীব্র কানফাটানো আওয়াজ – শব্দবিজ্ঞান গবেষণায় নতুন দিশা দেখাল দেবদারুর দল। গবেষণাগারে দীর্ঘ পরীক্ষানিরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, দেবদারু প্রজাতির ১৩টি গাছের
শব্দ শুষে নেওয়ার ক্ষমতা সর্বাধিক। অ্যাপ্লায়েড অ্যাকোয়াস্টিক জার্নালে প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের একদল গবেষকের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, গাছ সাইলেন্সরের কাজ করতে পারে। মোট ৭৬ টি নমুনা সংগ্রহ করে তাদের উপর গবেষণা চলেছে। গবেষণাগারে বিভিন্ন কম্পাঙ্কের কৃত্রিম শব্দ তৈরি করে তা নিয়ে পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা। ইউনিভারসিটি কলেজ অফ লন্ডনের গবেষক জিয়ান ক্যাংয়ের কথায়, “ছায়া এবং অক্সিজেন দেওয়া ছাড়াও গাছের শব্দদূষণ রোধের ক্ষমতা নগরায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ সুন্দর রাখার কাজ একাই অনেকটা করবে গাছ। ট্রাফিকের শব্দ থেক কলকারখানার আওয়াজ, বিভিন্ন গাছ বিভিন্ন ধরনের শব্দ টেনে নিতে পারে। তাই শহর সাজানো কিংবা তৈরির নকশায় এ ধরনের গাছের জন্য আলাদা জায়গা রাখুন। ”
[আরও পড়ুন: হাঁচি-কাশি নয়, নিশ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনা! গবেষকদের দাবিতে চাঞ্চল্য]
আরও আনন্দের কথা শুনিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অযাচিত শব্দ থেকে রক্ষা পেতে মোটেই আলাদা করে গাছ খুঁজতে হবে না। শহরাঞ্চলে যেসব গাছ দিব্যি বংশবিস্তার করতে পারে, সেই দেবদারু কিংবা পাইন, চেরি, পপলার গাছেরই এই ক্ষমতা আছে। কার ক্ষমতা কত বেশি, তা নির্ভর করে গাছের বয়স এবং কাণ্ডের পরিধির উপর। এই দুই ফ্যাক্টরকে ধরেই মূলত গবেষণার কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কাণ্ডের রুক্ষতার উপরেও নির্ভর করে এই ক্ষমতা। আবার কোনও এক জায়গায় গাছের ঘনত্বের উপরও নির্ভর করে দূষণ রোধের ক্ষমতা। দেখা গিয়েছে, বড় পাতা বিশিষ্ট গাছের চেয়ে ছোট পাতা এবং গুল্ম জাতীয় গাছ শব্দকে বেশি শুষে নিতে পারে। জিয়ান ক্যাংয়ের পরামর্শ, গাছকে প্রাকৃতিক ‘সাইলেন্সর’ হিসেবে ব্যবহার করুন, একইসঙ্গে শহরের পরিবেশ রক্ষা এবং সৌন্দর্যায়ন হবে।
[আরও পড়ুন: হাতের মুঠোয় করোনার দাওয়াই! গবেষকদের দাবি ঘিরে চাঞ্চল্য]
এক অঙ্গে এত কাজ! তাহলে কেনই বা এত সবুজ নিধন? কেন কৃত্রিম সৌন্দর্যে নগরকে ঝকঝকে, তকতকে করার প্রয়াস? যা আছে, তা দিয়েই তো সাজিয়ে তোলা যায় আমাদের বসতির বৃহৎ অংশ। তাহলে আর শব্দমাত্রা ৬০ থেকে ৬৫ ডেসিবেলে বেঁধে রাখার জন্য মাইকে প্রচার করে কৃত্রিম শব্দ ছড়ানোর প্রয়োজন হয় না বোধহয়।