পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন বেলেঘাটা ৩৩ পল্লির পুজো প্রস্তুতি৷
বিশাখা পাল: ‘ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে, অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে।’ ধর্মের নামে হানাহানির ঘটনা আজকের নয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। বিভিন্ন সময় মহামানবরা মানুষকে এক সুতোয় গাঁথতে চেয়েছেন। কিন্তু তার স্থায়িত্ব বেশি হয়নি। উলটে ধর্মের নামে বিভেদ হয়েছে মানুষে মানুষে। বয়েছে রক্তবন্যা। অবশ্য কিছু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বারবার সেই বিভেদ মেটাতে চেয়েছেন, আজও চান। এবার দুর্গাপুজোর থিমে উঠে এল সেই সম্প্রীতির কথা। বেলেঘাটা ৩৩ পল্লির পুজো মণ্ডপে উঠে এসেছে ধর্মের বিভেদ ভুলে এক হওয়ার কাহিনি।
থিমের পোশাকি নাম ‘আমরা এক, একা নই’। শিল্পী রিন্টু দাসের সৃষ্টিতে এই মণ্ডপে ‘অমর’, ‘আকবর’ আর ‘অ্যান্টনি’ সহাবস্থান করছে। হাত ধরাধরি করে সম্প্রীতির বার্তা দিতে চলেছে তারা। মণ্ডপে ঢুকেই চোখে পড়বে তার প্রতিচ্ছবি। চোখে পড়বে মন্দির-মসজিদ-গির্জার অপূর্ব সমন্বয়। কিন্তু কোনও ইমারতই গর্ব নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে নেই। একই ছাতার নিচে রয়েছে তারা। মহাকালের খাতায় এদের কারওরই শীর্ষাসন নেই।
[ আরও পড়ুন: ঈশ্বরের রূপ ও ভক্তির মেলবন্ধনে এবার উজ্জ্বল হবে দমদম পার্ক ভারতচক্রের পুজো ]
ধর্ম কখনওই মানুষের ঊর্ধ্বে নয়। এই বার্তা ফুটিয়ে তুলতে তিন ধর্মের প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি সব ধর্মের মানুষের মুখও সাজানো হয়েছে মণ্ডপে। এছাড়া রয়েছে মানুষের হাতে ধরা ধর্মের প্রতীকচিহ্ন। মণ্ডপে আরও একটি বিষয় নজর কাড়বে, সেটি হল ঢালাই মেশিন। শিল্পীর কল্পনার এর মধ্যে থেকে তিন ধর্মের ধর্মীয় উপাসনালয় মিলে মিশে একাকার। ঢালাই মেশিন থেকে গড়িয়ে পড়ছে সেই মিশ্রণ। আর সেখানেও সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রতিচ্ছবি। এছাড়া রয়েছে ঢালাইয়ের কাজ। কংক্রিটের দেওয়ালেও লেখা ‘আমরা এক, একা নই’।
শিল্পী রিন্টু দাসই এখান মূর্তি গড়ছেন। প্রতিটি মূর্তিই ডোকরার। মা দুর্গা এখানে ১০ ফুটের। লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশও ডোকরার। প্রতিটি প্রতিমাই থাকবে ঝুলন্ত অবস্থায়। গর্ভগৃহটি সাজানো হবে প্রদীপ দিয়ে। শিল্পী জানিয়েছেন, মা আলোর দিশারি। আঁধার কাটিয়ে আলোর সন্ধান দেন তিনি। তাই প্রদীপের ব্যবহার করা হবে মণ্ডপে। প্রতিমার সামনে রাখা থাকবে একটি কুণ্ড। সেখানে থাকবে ফুটন্ত তরল। মণ্ডপের উপরের অংশটি সাজানো হয়েছে খোলা আকাশের মতে করে। নক্ষত্রের আদলে এখানে লাগানো হয়েছে আলো। শব্দ হিসেবে এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে রাম-রহিমের সৌজন্য বিনিময়।
সম্প্রীতির এই বার্তা যে এবছর বেলেঘাটা ৩৩ পল্লির পুজোমণ্ডপে মানুষকে টেনে আনবে, তা নিয়ে আশাবাদী উদ্যোক্তারা। তাঁদের মতে, ‘আমরা এক, একা নই’-এর মাধ্যমে সম্প্রীতির এক অনন্য বার্তা ফুটে উঠবে। দর্শনার্থীরা তা সম্পূর্ণ উপভোগ করতে পারবে বলে আশাবাদী তারা।