মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: খুন নাকি দুর্ঘটনা? চারতলা ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে পড়ে বার সিঙ্গারের (Bar Singer) রহস্যমৃত্যুতে প্রশ্নের ভিড়। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটে হাওড়ার বাউড়িয়ার বুড়িখালি এলাকায়। নিহতের স্ত্রীর দাবি, ওই বার সিঙ্গারের প্রেমিকাই তাকে খুন করেছে। বার সিঙ্গারের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই তরুণীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে পেশায় বার ডান্সার। যদিও খুনের অভিযোগ অস্বীকার করে ধৃত।
নিহত শশীকান্ত মালিক, বছর ১২ আগে আমতার মুক্তিরচকের বাসিন্দা মামণিকে বিয়ে করেন। তাঁদের একটি পুত্র ও কন্যাসন্তানও রয়েছে। পেশায় বার সিঙ্গার শশীকান্ত প্রথমে অঙ্কুরহাটির একটি পানশালায় গান গাইতেন। বছরদুয়েক আগে আলমপুরের একটি পানশালায় গান গাইতে শুরু করেন। ওই বারেই কাজ করত কেয়া। সেখানেই তাদের পরিচয়। গড়ে ওঠে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক।
কেয়ার শ্বশুরবাড়ি হুগলির চুঁচুড়ায়। তার একটি ১১ বছরের মেয়ে রয়েছে। বছরখানেক আগে বাউড়িয়ার বুড়িখালিতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় কেয়া ও শশীকান্ত। সেখানেই থাকত দু’জনে। বুধবার সকালেও শশীকান্ত রাজাপুরে নিজের বাড়িতে যান। কিছুক্ষণ থাকার পর ফ্ল্যাটে ফিরে যান। রাত দু’টো নাগাদ কেয়া শশীকান্তের স্ত্রী মামণিকে ফোন করে। জানায়, শশীকান্ত বহুতলের বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে মামণি-সহ পরিবারের অন্যান্যরা সেখানে ছুটে যান। বাউড়িয়া থানার পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়।
মামণির দাবি, কেয়াই চক্রান্ত করে ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে শশীকান্তকে ফেলে দিয়েছে। তিনি খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কেয়া সরকারকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে পুলিশ। যদিও অভিযুক্ত কেয়া সরকার ওরফে মিস টিনার বক্তব্য, মদ্যপ অবস্থায় শশীকান্ত ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে আরও জানায়, শশীকান্তের সঙ্গে প্রায় দু’বছরের সর্ম্পক। কিন্তু শশীকান্ত যে বিবাহিত সেটা তিনি জানতেন না। মাসদুয়েক আগে তিনি জানতে পারেন শশীকান্ত বিবাহিত। এরপর শশীকান্তকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। যদিও শশীকান্ত সর্ম্পক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। কেয়া বলে, “বৃহস্পতিবার শশীকান্ত মদ্যপ অবস্থায় ফ্ল্যাটে আসে। সম্পর্ক নিয়ে আমার সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয়। সেই সময়ই শশীকান্ত বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়।” বৃহস্পতিবার কেয়াকে উলুবেড়িয়া আদালতে তোলা হয়। বিচারক তার ২ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
শশীকান্তের স্ত্রী মামণি মালিক বলেন, “বিয়ের পর দীর্ঘদিন সুখের সংসার ছিল। বছরদুয়েক আগে আমার মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। বছরদেড়েক আগে আমি ওদের সম্পর্কের কথা জানতে পারি। গত এপ্রিলে শশীকান্ত কেয়াকে নিয়ে আমাদের বাড়ি আসে। ও আমাকে বলে শশীকান্তকে ছেড়ে দিতে হবে। খুব অশান্তি হয়। শশীকান্ত আর রাতে বাড়িতে থাকত না। শশীকান্ত বাড়ি ফেরার সময় সন্তানদের জন্য মিষ্টি আনত। আবার কখনও তাদের হাতে টাকা দিয়ে যেত। কেয়াই আমার স্বামীকে মদ খাইয়ে বারান্দা থেকে ঠেলে ফেলে দিয়েছে। পরিকল্পনা করে স্বামীকে খুন করেছে। আমি ওর কঠোর শাস্তি চাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.