Advertisement
Advertisement

Breaking News

বোধনেই বিসর্জন, তিন সন্তানকে বাঁচিয়ে মহানন্দায় তলিয়ে গেলেন বাবা

মহানন্দার জলে তল্লাশি চালিয়েও হদিস মেলেনি পঞ্চান্ন বছরের ভুপালবাবুর।

Man drowns in Mahananda river while saving three kids
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:October 5, 2019 12:41 pm
  • Updated:October 5, 2019 12:41 pm

শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: বোধনেই বিসর্জনের আবহ মহানন্দাপাড়ে ইটাহারের গ্রামে। দীর্ঘশ্বাস মেশানো কান্নার জলে ধুয়ে গেল উৎসবের আমেজ।

[আরও পড়ুন: এয়ার স্ট্রাইকের প্রমাণ! বালাকোট হামলার প্রচারমূলক ভিডিও প্রকাশ করল বায়ুসেনা]

Advertisement

তিন ছেলেকে নিয়ে চাঁচলের জগন্নাথপুর ঘাট থেকে নৌকায় মহানন্দা পার হচ্ছিলেন ইটাহারের খরস্রোতা এলাকার বাসিন্দা ভুপাল শেঠ। মাঝ নদীতে আচমকা নৌকা উলটে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে তিন ছেলে-সহ বাবা নদীতে তলিয়ে যান। বাবা কোনও মতে সাঁতরে পাড়ে উঠে দেখেন ছেলেরা জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। মুহূর্তে ভরা মহানন্দায় ঝাঁপ দেন তিনি। একে একে তিন ছেলেকে উদ্ধার করলেও নিজেই নিখোঁজ হয়ে যান। ২৪ ঘন্টার বেশি সময় মহানন্দার জলে তল্লাশি চালিয়েও হদিস মেলেনি পেশায় হাট ব্যবসায়ী পঞ্চান্ন বছরের ভুপালবাবুর।

Advertisement

শুক্রবার খরস্রোতা গ্রাম ছিল থমথমে। শোকস্তব্ধ পরিবার ও পড়শিরা। কে বলবে কিছুক্ষণ আগেই বোধন হয়েছে। সেরা উৎসবে মেতেছে গোটা বঙ্গ সমাজ। ভুপালবাবুর বারো বছরের বড় ছেলে ঘরের মেঝেতে অঝোরে কেঁদে জানিয়েছে, এবারই প্রথম রায়গঞ্জে পুজো দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল বাবার। কিন্তু সেটা এই জীবনে হল না। সকাল থেকে নদীতে চোখ গ্রামের বাসিন্দাদের। একের পর এক দেহ উদ্ধার হয়েছে। কোথাও আরও দেহ ভেসে ওঠে কি না সেই খোঁজে দৌড়ঝাপ করেছে ছেলেরা।

মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বছর ছাপান্নর নাজরা বিবির দেহ মহানন্দার জল থেকে উদ্ধার হয়েছে আগেই। এদিন দুপুরে এলাকার বাসিন্দারা দেহ সনাক্ত করেন। জলে তলিয়েছেন বিহারের বারসই জেলার আবাদপুর থানার বাসিন্দা বছর ষাটের শেখ হজরত হোসেন। শুক্রবার বিকালে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। বাবার খোঁজে এদিন ভোর থেকে মহানন্দার পাড়ে ডুমরাল্লুর ঘাটে অপেক্ষায় ছিলেন বড় ছেলে শেখ মুজবুর। অবশেষে মাঝ নদীর জলে ভেসে ওঠে দেহ। পাড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে ছেলে বলেন, “সপ্তমীতে বাবাকে নিয়ে রায়গঞ্জ ও মালদহের পুজো দেখার কথা ছিল। কিন্তু হল না। মা আবাদপুরের বাড়িতে। কি জবাব দেব।” এদিন দুপুরে চাঁচোলের বছর চোদ্দের তামান্না পারভিনের দেহ উদ্ধার হয়। বাবা আকচার হোসেন মেয়েকে খুঁজতে রাত থেকে নদী পাড়ে। অনেক খোঁজের পর এদিন সকালে দেহ উদ্ধার হয়। মেয়ের দেহ জড়িয়ে কান্নায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন পেশায় দিনমজুর বাবা।

বৃহস্পতিবার বিকালে চাঁচোলের জগন্নাথঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই খেয়া নৌকা মহানন্দার জলে ভাসে। বিহারের ডুমরুল্লাঘাট হয়ে ইটাহারের মুকুন্দপুর ঘাটে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাঝ নদীতে হঠাৎ নৌকা উলটে জলে তলিয়ে যায়। সেখানে আবাদপুরের অন্তত বাইশজন যাত্রী ছিলেন বলে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই যাত্রীদের একাংশ মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের গুলন্ধর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকে তাঁর নিখোঁজ। এরপর শুক্রবার দিনভর একের পর এক দেহ ভাসতে শোকস্তব্ধ হয়েছে গোটা তল্লাট। যেদিকে তাকানো যায় শুধুই কান্নার শব্দ। একই আর্তনাদ-আমার প্রিয়জনকে ফিরিয়ে দাও।

[আরও পড়ুন: মহানন্দা থেকে উদ্ধার আরও ৫টি দেহ, এখনও নিখোঁজ বহু]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ