Advertisement
Advertisement

Breaking News

Purulia

পুরুলিয়ার অযোধ্যার রামায়ণ যোগ! রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠায় সীতাকুণ্ডতেও দিনভর অনুষ্ঠান

সীতাকুণ্ড দেখতে ফি দিন ভিড় জমান পর্যটকরা।

Many functions at Purulia Sitakund during Ram Mandir Inauguration । Sangbad Pratidin
Published by: Sayani Sen
  • Posted:January 22, 2024 4:47 pm
  • Updated:January 22, 2024 4:53 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বিতর্ক যতই থাক। শ্রীরাম জন্মভূমি উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় নির্মীয়মান মন্দিরের উদ্বোধন ও রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠায় আবার সামনে চলে এল বাংলার অযোধ্যা। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের সঙ্গে যোগ রয়েছে রামায়ণের! এখানে যে রয়েছে সীতাকুণ্ড। রয়েছে অখিল ভারতীয় বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের আওতায় পূর্বাঞ্চল কল্যাণ আশ্রমের রামমন্দির। যা সেজে উঠেছে আলোকমালায়। দেউলের দেওয়াল জুড়ে রয়েছে রামায়ণের নানা ছবি। তাই রাম আবেগে অযোধ্যা পাহাড়ের সীতাকুণ্ডতে সোমবার হল দিনভর অনুষ্ঠান।

কল্পকাহিনি, লোককথাতেই বাংলার এই অযোধ্যাকে ঘিরে যেন আরও নতুন করে জন্ম নিল ধর্মীয় আবেগ। আর তাকে উসকে দিয়েছে জেলার হিন্দু সংগঠনগুলি। সর্বোপরি বিজেপিও। তাই মুখে মুখে ফেরা কথাকেই ‘ইতিহাস’ বলে বিশ্বাস করছেন এই পাহাড়ে বেড়াতে আসা বিপুল পর্যটক থেকে এখানকার মানুষজন। কিন্তু কল্পকাহিনি, কিংবদন্তিকে ইতিহাসের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা কি ঠিক? এই বিতর্কেই বাংলার অযোধ্যা আবেগে ভাসছেন তামাম ছোটনাগপুর মালভূমি। রাম-সীতার ১৪ বছর বনবাসে পুরুলিয়ার অযোধ্যাতেও পা রেখেছিলেন তাঁরা। এই জনশ্রুতি বহুদিনের। কেউ বলেন আড়াই দিন। আবার কেউ বলেন ২৭ দিন। অযোধ্যা হিলটপের গড়ধামের পাশে কূপ বা কুণ্ডের মতো ছোট জলাধার রয়েছে। সেটাই দীর্ঘদিন ধরে সীতাকুণ্ড নামে পরিচিত। আর এই লোককথাকে নিয়ে অযোধ্যার আরও পর্যটনের প্রসারে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন পর্যটনমন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেলকে পুরুলিয়ার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো চিঠি লেখেন।

Advertisement
Ram
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের রাম মন্দির। নিজস্ব চিত্র

[আরও পড়ুন: কাশ্মীরে বিক্রি করেছিল স্বামী! ২৪ বছর পর বাড়ি ফিরে সটান থানায় মহিলা]

হিন্দিতে দেওয়া সেই চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, “অযোধ্যা পর্যটকস্থল ঐতিহাসিক ইস কারণ সে হে কি ভগবান শ্রীরামজি, অপনে বনবাস কে দৌরান ইহা পর আয়ে থে তথা মাতা সীতাজি কি জব পিয়াস লগি থি শ্রীরাম জী নে অপনে বানসে ধরতি মে মারা অউর পানি নিকলা তথা মাতা সীতানে আপনি পিয়াস বুঝাই। উও স্থান আজ ভি অযোধ্যা হিল পর মজুদ হে জো সীতাকুণ্ড কে নাম সে জানা জাতা হ্যায়।” অর্থাৎ রাম-সীতা বনবাসে থাকার সময় এই পাহাড়ে এসেছিলেন। সেই সময় সীতাদেবীর জল পিপাসা পাওয়ায় ওই অযোধ্যার ভূমে তির নিক্ষেপ করে জল বার করা হয়। সেই জল পান করেন সীতাদেবী। তাই পাহাড়ের একটি এলাকার নাম সীতাকুণ্ড।” যদিও রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের আওতায় থাকা সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ তাদের পর্যটন প্রচারপত্রে সীতাকুণ্ডকে ‘অটো ফ্লো স্পেশালি ফর স্টুডেন্টস অফ অ্যানথ্রোপোলজি’ বলে প্রচার করে থাকে। জেলার ইতিহাস গবেষক দিলীপ গোস্বামী জানান, “অযোধ্যা পাহাড়ে নাকি এখনও সীতার চুল পাওয়া যায়। এই সবই কল্পকাহিনি, কিংবদন্তি। একে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহার একেবারে ঠিক নয়।”

Advertisement
Sitakund
পুরুলিয়ার সীতাকুণ্ড

আদিবাসী লোকসংস্কৃতি গবেষক তথা শিক্ষক জলধর কর্মকার বলেন, “হিমালয় যখন সৃষ্টি হয়নি তখন এখানে যাযাবরের মতো বিরহোড় জনজাতি ঘুরে বেড়াতো। তারপর ভূমিজ ও সাঁওতালরা এখানে আসেন। তাই এই ভূমি আদিবাসীদের। তারা সবাই মূর্তিপূজার বিরোধী। তাই এই পাহাড়ে রাম-সীতার গল্পের সঙ্গে প্রাচীন জনজাতির সংস্কৃতির কোন মিল নেই। তাই সাঁওতালি ভাষায় অযোধ্যা পাহাড়কে ‘আয়োদিয়া’ বলে। যার অর্থ অযোধ্যা মা সবাইকে অতিথিশালার মতো এই পাহাড়ে আশ্রয় দিয়েছেন। অযোধ্যা সিং বলে এখানে একজন ভূমিজ জমিদার ছিলেন। যাঁর নামকরণে অযোধ্যা হয় বলে কথিত আছে।” পুরুলিয়া শহরের রামায়ণ পাঠকরা বলেন, তুলসীদাসের ‘রামচরিত মানস’-এ কোথাও পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের উল্লেখ নেই। এমনকি বাল্মিকির রামায়ণের সুন্দরকাণ্ডেও এই অযোধ্যার কথা কোথাও পাওয়া যায়নি।”

Rally
অযোধ্যা পাহাড়ের সীতাকুণ্ড থেকে কলসযাত্রা। নিজস্ব চিত্র

এই বিতর্কের মধ্যেই সীতাকুণ্ড দেখতে ফি দিন ভিড় জমান পর্যটকরা। গাইডরা সীতাকুণ্ডের নানা বিষয় পর্যটকদের কাছে তুলে ধরেন। অযোধ্যা হিল টপের বাসিন্দা তথা পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “শ্রীরামচন্দ্র-সীতা বনবাসে থাকাকালীন দণ্ডক যাওয়ার পথে রাম-সীতা এখানে এসেছিলেন। সীতার তৃষ্ণা নিবারণে পাতালভেদী বান প্রয়োগ করে শ্রীরামচন্দ্র মাটি-পাথরের বুক চিরে জল বের করে এনেছিলেন। সেই কূপ বা কুণ্ড যা সীতাকুণ্ড নামে পরিচিত। এখনও সেখানে অবিরাম জল বার হয়ে আসে। যা এলাকার মানুষ ভীষণ পবিত্র বলেই জানেন। এই জল আপার ড্যামে মিশেছে। এই জলধারাকে পাহাড়ি বুড়বুড়ি নদীর জল বলা হয়ে থাকে।” আর সেই আবেগেই সোমবার এলাকার মহিলারা সীতাকুণ্ড থেকে ১০৮ কলসি জল নিয়ে ২০০ মিটার দূরে থাকা রাম মন্দিরে নিয়ে যান। সেই জলেই হয় পুজোপাঠ। ভোগ বিতরনের পর সন্ধ্যায় হয় ভজন-কীর্তন। আর এই পূণ্যদিনে অযোধ্যা পাহাড়ের কালিপাহাড়িতেও কালী মন্দিরের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়।

[আরও পড়ুন: অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনে মোদি, আরেক মন্দিরে ঢুকতে না পেরে রাস্তায় বসে রাহুল]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ