Advertisement
Advertisement

Breaking News

পুরুলিয়া নিয়ে সংসদে ঝড় না তুলতে পারলে ইস্তফা! সুযোগের আর্জিতে আবেগঘন পোস্ট নেপালের

দিল্লি বহু দূর! তবুও অঙ্ক কষা শেষ নেই অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের।

Nepal Mahata Facebook post sparks row
Published by: Paramita Paul
  • Posted:April 16, 2024 8:54 pm
  • Updated:April 16, 2024 11:17 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জানেন দিল্লি অনেক দূর! যেখানে শাসকদল তৃণমূল আর বিজেপির ভরা বাজার। সেখানে দলের বেহাল সংগঠনে সিপিএম যতই হাতে ‘হাত’ দিক, দিল্লি পৌঁছানোর স্বপ্ন পূরণ বড়ই জটিল। তবুও একটা সুযোগ চাইছেন তিনি। ফরওয়ার্ড ব্লক হীন বামফ্রন্টকে সঙ্গী করে শুধু একটা সুযোগ। আর তাই আবেগতাড়িত হয়ে মঙ্গলবার নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে বসেছেন, “পুরুলিয়া জেলার সাধারণ মানুষের কাছে আমার একটাই আবেদন আমাকে একটা সুযোগ দিন আমি পুরুলিয়া জেলার যা যা সমস্যা আছে সেইগুলো নিয়ে যদি ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে সংসদে তোলপাড় না করতে পারি, আমি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে পুরুলিয়ার সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চাইব।”

পুরুলিয়ায় ভোটের এক মাসেরও বেশি সময় আগে পুরুলিয়ার রাজনীতির অন্যতম ‘মহারথী’ নেপাল মাহাতোর এমন আবেগতাড়িত পোস্ট নাড়িয়ে দিয়েছে সাবেক মানভূমের রুখা ভূমিকে। এই পোস্টে জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক মহলে জল্পনার শেষ নেই। তাহলে কি বিজেপি, তৃণমূল ছেড়ে ‘ইস বার নেপাল মাহাতো?’ সামাজিক মাধ্যমের ওই পোস্টেই জেলার আবেগকে ৪ বারের বিধায়ক আরও উসকে দিয়েছেন ‘ভোট ফর পুরুলিয়া’, ‘ফাইট ফর পুরুলিয়া’ হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে। আসলে ‘ফাইট ফর পুরুলিয়া’-র স্লোগান যে তাঁর বাবা, প্রয়াত সাংসদ দেবেন্দ্রনাথ মাহাতোর। যা সাতের দশকে মাত করে দেয় এই মানভূমে। বাবার সেই হিট স্লোগানকেই প্রায় ৫০ বছর পর আবার ভোটের ময়দানে ফিরিয়ে আনলেন নেপাল। আর তাতে যেমন কমেন্ট হচ্ছে। তেমনই হচ্ছে শেয়ার, লাইক। ফেসবুকে লেখা চলছে ‘এবার নেপাল মাহাতো’। ‘ইস বার নেপাল মাহাতো’! কিন্তু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা তুমুল সমালোচনা করছেন। তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “দেখুন, ভোট চাইতে প্রার্থীরা তো এমন আবেদন করতেই পারেন। কিন্তু মানুষ বিচার করবেন। উন্নয়নের সঙ্গে থাকবেন। নাকি প্রতিশ্রুতিতে।” বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর কথায়,”বাংলা থেকে কংগ্রেস অনেক আগেই মুছে গিয়েছে। এবার সারা দেশ থেকে মুছে যাবে। নেপালবাবু আমাদের চার বারের বিধায়ক ছিলেন। মানুষ ওনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।”

Advertisement

Advertisement

[আরও পড়ুন: মমতার উত্তরসূরি কি অভিষেক? মুখ খুললেন তৃণমূল সুপ্রিমো]

কিন্তু ২০১৪-র লোকসভাতেও যে পুরুলিয়া জুড়ে এমন হাওয়ায় তুলে দিয়েছিলেন নেপাল। সেবারও ছিল তৃণমূলের ভরা বাজার। নাকি এ সবই ভোট যুদ্ধের কৌশল?
নিজের পালে হাওয়া তুলতে এমন আবেগঘন প্রচার। তবে ২০১৪-তে এই জেলায় ‘নেপাল হাওয়া’ উঠলেও ভোটের ফলাফলে তিনি চলে গিয়েছিলেন একেবারে তিন নম্বরে। রাজনৈতিক সমীকরণ আর ভোটের অঙ্কে এবারও তিনি সেই তিন নম্বর থেকেই শুরু করেছেন। আর সেই তিনে থেকেই দিল্লি যাওয়ার অঙ্ক কষছেন অঙ্কের মাস্টারমশাই। অ্যাপ্লাইড ম্যাথামেটিক্স এমএসি। ঝালদা সত্যভামা বিদ্যাপীঠ থেকে অবসর নেওয়া শিক্ষক। একদা ‘বাঘমুন্ডির বাঘ’ নামে পরিচিত ছিলেন। যিনি শুধু ২০১৪-র লোকসভাতেই তিনে চলে যান নি। ২০১৯-এ বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর কাছে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ২১-এ তাঁর বাঘমুন্ডি বিধানসভায় তৃণমূলের তরুণ প্রার্থী সুশান্ত মাহাতোর কাছে হার। কিন্তু দিল্লি যেতে আঁক কষতে ছাড়ছেন না অঙ্কের মাস্টারমশাই।

হাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাপ্ত ভোটের পরিসংখ্যান। পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে ৩২টি জেলা পরিষদ আসনে তাদের ভোট ৮৮ হাজার ৪৮৩। বামফ্রন্টের ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৪২৪। সেখানে কুড়মিদের ভোট ৬৮ হাজার ১৯৮। শাসকদল তৃণমূলের ভোট ৫ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯৮০। বিজেপি ৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ৩৮৩। হাতের সামনে এই হিসাব থাকা সত্ত্বেও সব কিছুকে ওলটপালট করে তিন থেকে একে পৌঁছতে দিল্লি যাওয়ার অঙ্ক শুরু করেছেন। ২০১৪, ২০১৯-এ অঙ্ক না মিললেও এবার তিনি সেই অঙ্ক মেলাবেনই। প্রত্যয়ী নেপাল।

[আরও পড়ুন: গোয়া নির্বাচনে ছিলেন আপের আর্থিক দায়িত্বে, লোকসভা ভোটের আগে ইডির হাতে গ্রেপ্তার সেই চনপ্রীত]

আসলে তিনি যে কংগ্রেসের এক অন্য মুখ। চেনা স্রোতের বাইরে হাঁটা এক মানুষ। রাজ্যে পালাবদলের পর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার একের পর এক ‘অফার’ ফিরিয়ে পুরুলিয়ায় অভিভাবকের মতো কংগ্রেসকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। যিনি প্রদেশ কংগ্রেসের কচকচানি থেকে অনেক দূরে। কোনও বেনিয়ম, দুর্নীতি তাঁর নামের সঙ্গে যায় না। বরং তাঁর নামের পাশে রয়েছে পুরুলিয়ার সেচ নিয়ে আন্দোলন, ছোট বিমানবন্দরের পুনরুজ্জীবনে লড়াই, ব্রিটিশ আমলের সাহেব বাঁধকে জাতীয় সরোবরের স্বীকৃতি দিতে দিল্লিতে দরবার, অযোধ্যা পাহাড়ের পর্যটনের আরও প্রসারে বারবার মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ।

শিল্পায়নে গলা ফাটানো স্লোগান, পানীয় জলের স্থায়ী বন্দোবস্ত-এ বিধানসভায় ধারাবাহিক প্রশ্ন। আদ্রা-ঝাড়গ্রাম রেলপথে পদযাত্রা। তালিকা অনেক বড়। সেই তালিকায় অনেকটাই পেরেছেন। অনেক কিছু পারেননি। কিন্তু একটা সুযোগের আশায় এক একটি করে ভোট চাইছেন নেপাল। সকাল থেকে রাত। কোনরকম পদযাত্রা, আড়ম্বরহীন প্রচারেই তাঁকে ভোট দেওয়ার আবেদন রাখছেন। আজও নেপালকে যে ‘কাজের মানুষ, কাছের মানুষ’ হিসাবেই জানে এই সাবেক মানভূম।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ