Advertisement
Advertisement

শুধুই একপাক্ষিক খবর! বঙ্গ সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা কে করবে?

অনেক সংবাদমাধ্যমের ভোটের আগের লাইন ফলাফলের সঙ্গে মিলছে না।

Importance of scrutinizing on news in Bengali media | Sangbad Pratidin
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:July 14, 2023 1:02 pm
  • Updated:July 14, 2023 1:02 pm

অপরাজিতা সেন: পঞ্চায়েত ভোটপর্ব মোটামুটি মিটল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, কমিশন, পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী, সরকার, ভোটার, সকলের ভূমিকা নিয়েই আলোচনা হল ক’দিন ধরে। কিন্তু মিডিয়া? তাদের ভূমিকা? বাস্তব হল, বাংলার কয়েকটি টিভি চ‌্যানেল আর কাগজ লাগাতার প্রচার করে গিয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে, সংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে।

কোনও খারাপ ঘটনা ঘটলে মিডিয়া কি দেখাবে না? একশোবার দেখাবে। কিন্তু, সেটি কেন কীভাবে ঘটছে, তার দু’দিকের বক্তব‌্য থাকবে। এক পক্ষের খারাপটা দেখাব, আর অন‌্য পক্ষের বেলা আড়াল করব, এটা কোন‌ নীতি? আবার দেখুন, একটা খারাপ সারাদিন দেখাবে, কিন্তু ভাল কোনও খবর দেখাবে না, এটাও মানুষ ধরে ফেলেছেন। মিডিয়া প্রেডিক্টেবল হয়ে গিয়েছে। তাই বেশ কিছু মিডিয়ার ভোটের আগের লাইন আর ভোটের ফলাফল, মিলছে না। তৃণমূলের পক্ষে এত্তবড় জনমত শুধু ছাপ্পা ভোটে? পাগলেও বিশ্বাস করবে না। কমবেশি ৬১,০০০ বুথ, অবাধ ভোট, কয়েকটিতে গোলমাল, মৃত্যু। অবাধ ভোটের অংশের ভোটদাতাদের মতামতকে উপেক্ষা করছেন, অপমান করছেন? মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ‌্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: যশস্বীর অভিষেক শতরান, সেঞ্চুরি রোহিতেরও, ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে রেকর্ডের ফুলঝুরি ভারতের]

টিভির টক্‌ শো? প‌্যানেল? ২২০ বিধায়কের দলের ২ মিনিট, ৬৮ বিধায়কের ২ মিনিট, ০ বিধায়কের ২টো দলেরও ২ মিনিট করে। আইনজীবী নামে বিরোধী। প্রাক্তন পুলিশকর্তারা যারা সরকারবিরোধী জ্ঞান দেন, বাম জমানার সন্ত্রাসের আমলে তাঁরাই ছিলেন দলদাস। পরিসংখ‌্যানবিদ জীবনে ভোটের আগে কোনও পূর্বাভাসের সংখ‌্যা মেলাতে পারেননি, শুধু তৃণমূলবিরোধী বিষ ছড়ান চ‌্যানেলের লাইন এস্টাবলিশ করতে। নাগরিক সমাজের নামে ডাক্তারবাবু বিবেক সাজেন, নিজে বেসরকারি হাসপাতালে বিপুল টাকায় অপারেশন করে রোগীর শরীরে ভুল করে গজ ফেলে রাখেন, এসএসকেএমকে (SSKM) বিনা পয়সায় পরে সেই ভুল সংশোধন করতে হয়। টক্‌ শোর নামে তৃণমূলবিরোধী ইস্যু সামনে রেখে তৃণমূল বক্তা বনাম সঞ্চালক-সহ সব পক্ষের সংগঠিত বিরোধিতা চলে। দিনভর সংবাদবাছাই, সংবাদ পাঠক-পাঠিকা, সাংবাদিকরাও একই সুরে পক্ষপাতদুষ্ট বিপণন চালান। কেউ কেউ এত চেঁচান যে তাঁদের অফিসপাড়া এবং দর্শকের বাড়ি, সর্বত্র কাকপক্ষীদের সংকট শুরু হয়েছে, পক্ষীপ্রেমী ও পরিবেশপ্রেমীদের অচিরেই আন্দোলনে নামতে হবে। মিডিয়ার লক্ষ‌্য, তৃণমূলকে ছিঁড়ে খাও। বিরোধীরা কী বলল, কোর্ট কী বলল, তার বাছাই অংশ চালিয়ে হাওয়া তৈরি করো।

Advertisement

এবারের ফল থেকে কি শিক্ষা নেবে মিডিয়া? এত দিনভর একতরফা প্রচার, তবু মানুষের মধ্যে তার প্রভাব নেই কেন, আত্মবিশ্লেষণ হবে না? নাকি প্রতিষ্ঠানবিরোধী চিৎকার দিয়ে টিআরপির দৌড়ে নীতি, যুক্তি সব ভেসে যাবে? তৃণমূলের ভুল নেই? তৃণমূল ধোয়া তুলসীপাতা? এখানেও ভাল-মন্দ আছে, গোষ্ঠী আছে, সমাজের সব বৈশিষ্ট ছাপ স্বাভাবিকভাবেই এখানেও আছে। কিন্তু তা হলেও মানুষ কেন তৃণমূলকেই ভোট দিলেন? এটাই বাস্তবমুখী গবেষণার সাংবাদিকতার কাজ। তা না করে শুধু বিভ্রান্তি ছড়ানো হল।

[আরও পড়ুন: অভিজিৎ থেকে অরিজিৎ, বাঙালি গায়কের প্রেমে শাহরুখ! ‘জওয়ান’ ছবিতে কিং খানের নতুন চমক]

কিছুদিন আগেই এবিপি আনন্দের ‘যুক্তি তক্কো’ অনুষ্ঠানে একটা বিষয় উঠেছিল। ধরা যাক, কোথাও রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে তৃণমূলের (TMC) নেতাকে বিক্ষোভ দেখানো হল। সঙ্গে সঙ্গে সর্বত্র ব্রেকিং, হুলস্থুল। এই আপাত-দৃশ‌্যটির সঙ্গে যে ভোটের সম্পর্ক নেই, এটা বোঝা দরকার। যাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁদের এই বিক্ষোভ ঠিক। কিন্তু তাঁরাও জানেন যে আরও অনেকগুলি স্কিমের সুরক্ষা কবচে তাঁরা নিরাপদ। ফলে একটি ইস্যুর বিক্ষোভে ছবি, খবর হতে পারে, কিন্তু উলটো ভোট হয় না। তাছাড়া গ্রামে এত রাস্তা হয়েছে যে খারাপ রাস্তার অভিযোগ আনুপাতিক হারে অনেক কম। মিডিয়া ব‌্যতিক্রমকে নিয়ম দেখাতে গিয়ে ভুল করেছে।

তাছাড়া মানুষ জানেন তৃণমূলের যেটা খারাপ, সেটা অন‌্য দলে এত বেশি আছে যে তাঁরা ঝুঁকি নিতে চান না। সংবাদমাধ‌্যম মানুষের মন পড়তে পারেনি। আর এখনও জেদের বশে তাদের ভুলের পক্ষে যুক্তি সাজানোর চেষ্টাটাই চাপিয়ে দিচ্ছে দর্শকদের উপর। কাগজ পড়া বা টিভি দেখাটা মানুষের অভ্যেস; কিন্তু মানুষ এর দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন না, এটা মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির সামনে একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন রাখছে। এটা ঠিক, মিডিয়া মূলত প্রতিষ্ঠানবিরোধী খবরেই বেশি আকর্ষণ শক্তি পায়। সেটা থাকবেই। কিন্তু দর্শক বুঝে যাচ্ছেন এই ধরনের খবর, বিশ্লেষণ দিয়ে তাঁকে চালিত করতে চাইছে মিডিয়া, সেটা কিন্তু মানুষ হজম করবেন না। ইস্যুভিত্তিক ‘ছি ছি’ রব যে সামগ্রিক ভোটকে প্রভাবিত করে না, করবে না; এটা বঙ্গমিডিয়া মেনে নিলেই মঙ্গল।

তৃণমূলের এবার এই বড় জয়ের কারণ? (১) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সামাজিক প্রকল্পের পরিষেবা। (২) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার এবং সাংগঠনিক কাঠামোতে গুরুত্ব। (৩) কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতি ও বৈষম‌্য-প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে জনমত। (৪) বিরোধীদের নেতৃত্বের শূন‌্যতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতা। এগুলোকে উপেক্ষা করে যাঁরা ভেবেছিলেন ভোট হবে কোর্টে, ফেসবুকে, কাগজে, চ‌্যানেলে বসে, তাঁরা কখনওই তাঁদের ইচ্ছেপত্রকে মানুষের ভোটের ফলাফলের সঙ্গে মেলাতে পারবেন না। দুর্ভাগ‌্য, আমাদের কিছু মিডিয়াও মানুষের মতামত দেখানোর বদলে নিজেদের বেশি শক্তিশালী ভেবে নিজেদের ইচ্ছেটা মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। ফলাফল তো দেখাই যাচ্ছে। আর চ‌্যানেলের সমীক্ষা? যে সংস্থাই করুক, চ‌্যানেলের লাইন বুঝেই ফলাফল। এবারও দেখলাম। তা, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের সমীক্ষা যারা মেলাতে পারেনি, তাদের দিয়ে আবার! ভোটের আগে দর্শককে প্রভাবিত করার আর কত চেষ্টা হবে? যারা পূর্বাভাস দিচ্ছে, তাদেরটা মিলছে কি না, সেই তুলনাটাও দেখানো হোক।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ