Advertisement
Advertisement
Women

‘ওরা কাজ করে’

ভারতে কাজের জগতে মেয়েদের অংশ গ্রহণ এবং অবস্থান মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়।

Women and economic independence, here is the scenario | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:September 25, 2023 8:16 pm
  • Updated:September 25, 2023 8:16 pm

ভারতে কাজের জগতে মেয়েদের অংশ গ্রহণ এবং অবস্থান মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। তার উপর রয়েছে নানা ধরনের ভাগাভাগি ও অনুপাত। ‘নারীমুক্তি’-র জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা জরুরি। সেটি কোন পথে? কলমে দীপেন্দু চৌধুরী

‘অ্যানুয়াল বুলেটিন অফ পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স’-এর রিপোর্ট বলছে- ২০১৯-’২০ আর্থিক বছরে ভারতে কর্মরত পুরুষের সংখ্যা ছিল ৫৬.৮ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে মহিলাদের সংখ্যা ছিল অর্ধেকেরও কম- ২২.২ শতাংশ।

Advertisement

বাজারের ব্যাকরণ বলে- কোনটা কাজ আর কাজ নয়- সেটা ঠিক হয় অর্থমূল্যে। বাজারি অর্থনীতির মানদণ্ডে ঘরের কাজ, যে-কাজ মূলত ঘরের মেয়েরা করেন, সেই কাজের আগে হিসাব-নিকেশ করা হত না। সম্প্রতি, এই ধরনের অনেক কাজ বাজারি অর্থনীতির হিসাবের মধ্যে ঢুকেছে। তবুও, উত্তর-সত্য প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে কর্মরত মহিলাদের অংশগ্রহণ শতাংশের হিসাবে পুরুষদের তুলনায় কম।

Advertisement

বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, ভারতে মহিলাদের কাজের সুযোগ তুলনামূলক বিচারে অপ্রতুল। কাজের সুযোগ থাকলেও ‘ওভারটাইম’ করার সুযোগ প্রায় নেই। বিশ্বব্যাঙ্কের ২০১৯ সালের তথ্য দাবি করছে, আমাদের দেশে মাত্র ২০.৩ শতাংশ মহিলা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আবারও বলতে হচ্ছে, ভারতে কর্মক্ষেত্রের সব সেক্টরে ‘লিঙ্গ বৈষম্য’ নজরে পড়ে। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নতি ধাক্কা খায়, বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে এর ব্যাপক প্রভাব লক্ষ করা যায়।

[আরও পড়ুন: দমনমূলক পদক্ষেপ নয়, সংবাদমাধ্যমের গতিপথ হোক উন্মুক্ত]

ভারতে ‘ফিমেল লেবার পার্টিসিপেশন রেট’ বিশ্বের গড় ৪৭ শতাংশের থেকে অনেক কম- ২৬ শতাংশ। অথচ ১৯৮৩ সালে এই হার ছিল ৩১.৯ শতাংশ। প্রতিবেশী বাংলাদেশ (৩০.৫ শতাংশ) এবং শ্রীলঙ্কা (৩৩.৭ শতাংশ) আমাদের চেয়ে এগিয়ে এখন। সূত্রের দাবি, মাত্র ১০.৩ শতাংশ মহিলা ভারতের শহরকেন্দ্রিক উন্নত মানের কাজের সঙ্গে যুক্ত। আবার শহরকেন্দ্রিক কাজের সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। কর্মক্ষেত্রে মজুরি বা পারিশ্রমিক অনিয়মিত। আমাদের দেশে শিশুসন্তানকে নিরাপদ জায়গায় রেখে দেওয়ার মতো সংস্থার অভাব। তদুপরি কর্মস্থলে নিরাপত্তার ছন্নছাড়া ভাব আরও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। ভারতে ৪০-৪৪ বছরের মহিলারা বেশি সংখ্যায় কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই সংখ্যাটি ২৫-২৯ বছরের মহিলাদের থেকে প্রায় দ্বিগুণের বেশি।

‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’-র (সিএমআইই) রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে- করোনাকালীন লকডাউনের সময় ভারতের শহরাঞ্চলে ২১.৯ শতাংশ মহিলার কাজ ছিল না। পাশাপাশি, গ্রামীণ ক্ষেত্রের ১৫.৩ শতাংশ মহিলা কোনওরকম কাজের সুযোগ পাননি। তুলনায় মাত্র ১০.৯ শতাংশ শহরের পুরুষদের কাজ ছিল না।

‘অ্যানুয়াল বুলেটিন অফ পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স’-এর (পিএলএফএস) রিপোর্ট বলছে- ২০১৯-’২০ আর্থিক বছরে ভারতে কর্মরত পুরুষের সংখ্যা ছিল ৫৬.৮ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে মহিলাদের সংখ্যা ছিল অর্ধেকেরও কম- ২২.২ শতাংশ। ২০২১ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ভারতে কর্মরত মহিলাদের শতাংশের হার কমে যায় ১৬.৯ শতাংশ। রাজ্যওয়াড়ি হিসাব দেখলে শীর্ষে স্থান করে নেওয়া রাজ্যগুলির অবস্থান যথাক্রমে হিমাচল প্রদেশ (২৯.৬ শতাংশ), অন্ধ্রপ্রদেশ (২৩.১ শতাংশ), তামিলনাড়ু (২৪.২ শতাংশ), কেরল (১৯.৫ শতাংশ)। পিছিয়ে রয়েছে বিহার, দেশের রাজধানী দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশ। বিহার রাজ্যে কর্মরত মহিলার সংখ্যা ৪.৪ শতাংশ। দিল্লিতে ৮.৮ শতাংশ এবং উত্তরপ্রদেশে ৯.৯ শতাংশ। ২০১৯-’২০ আর্থিক বছরের পরবর্তী সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, গ্রামীণ ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল ১৮.৫ শতাংশ। তুলনায় কর্মরত পুরুষদের অংশগ্রহণ গ্রাম এবং শহর উভয় ক্ষেত্রে প্রায় দ্বিগুণ। গ্রামীণ ক্ষেত্রে ৫৬.৩ শতাংশ, এবং ৫৭.৮ শতাংশ শহরাঞ্চলের পুরুষরা কাজ করতেন।

[আরও পড়ুন: দাবানল-বিধ্বস্ত কানাডার খবরের লিঙ্ক ব্লক করেছে ‘মেটা’, কেন?]

এই হিসাব বা ছবি দেশের ধর্ম-বর্ণ, জাতি-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সামগ্রিকভাবে আমরা পেয়েছি। আলাদা করে সম্প্রদায়ভিত্তিক হিসাব না পেলেও একটি সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে- ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়েদের কাজের সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম। ভারতে কর্মরত মহিলাদের ১০ ভাগের ১ ভাগ মুসলিম মহিলা কাজের সুযোগ পান। গবেষকদের পর্যবেক্ষণ হল- লাগাতার ঘৃণা-ভাষণ এবং নিয়োগকর্তাদের উদাসীনতা এর জন্য অংশত দায়ী। শিক্ষিত, কম-শিক্ষিত এবং নিরক্ষর মুসলিম মহিলাদের কাজের সুযোগ এই কারণে আমাদের দেশে কম। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে কাজ করছে এমন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমাজকর্মীদের বক্তব্য, এই সম্প্রদায়ের মহিলারা আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন। কিন্তু তঁারা কর্মক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন সামাজিক বিভাজনের কারণে। ‘কোভিড ১৯’ প্যানডেমিক চলাকালীন ‘করোনা জেহাদ’ বলে দেগে দেওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল- মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর। অর্থাৎ করোনা ছড়িয়ে পড়ার দায় বর্তেছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর।

উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মুসলিম মেয়েরা উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি নিয়েও সরকারি বা বেসরকারি কাজের বাজারে সেভাবে কাজ পাচ্ছেন না। নিম্ন আয়ের মুসলিম পরিবারের মেয়েরা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে কাজ করতে বাধ্য হন। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা স্বীকার করেই কাজে যেতে হয় তাঁদের। উত্তর ভারতের গৃহস্থালি কর্মী সংগঠন ‘সংগ্রামী ঘরেলু কামগড় ইউনিয়ন’-র সদস্য শ্রেয়া ঘোষ। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলাদের সিংহভাগ রান্না এবং বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করেন। একটি অংশ পোশাক তৈরি ও ‘গার্মেন্ট’ শিল্পে যুক্ত। একটি অংশ নির্মাণ শিল্পে কাজ করে। আর, সেখানকার বাকি মহিলারা দলিত সম্প্রদায়ের। তাহলে ‘আধুনিক’ ভারতেও কি ‘নারীমুক্তি’ ‘সোনার পাথরবাটি’-র মতো শব্দ হয়ে থেকে যাবে?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ