Advertisement
Advertisement
Nutraceuticals

ক্রমশ বাড়ছে পরিপূরক খাদ্যপণ্যের চাহিদা, কী এই নিউট্রাসিউটিক্যাল?

সারা বিশ্বে নিউট্রাসিউটিক্যালের বাজার বর্তমানে ২০২৩ সালে ৪১৮ বিলিয়ন ডলার।

New Concepts in Nutraceuticals as Alternative for Pharmaceuticals । Sangbad Pratidin
Published by: Sayani Sen
  • Posted:November 1, 2023 8:41 pm
  • Updated:November 1, 2023 8:43 pm

সারা বিশ্বে নিউট্রাসিউটিক্যাল বা পরিপূরক খাদ্যপণ্যের বাজার বর্তমানে ২০২৩ সালে ৪১৮ বিলিয়ন ডলার। কম পাউন্ডেড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট ৫.৩%। ফলে ২০৩৩ সালে আনুমানিক ৭০৩ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। বিশ্ব নিউট্রাসিউটিক্যাল বাজারের বৃদ্ধি এবং ভারতের সম্ভাবনা দেখে, বহুজাতিক এবং ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি এই ধরনের খাদ্যপণ্যের বাজার ধরতে উদ্যোগী হয়েছে। সুস্বাস্থ্য প্রদানকারী এবং শারীরবৃত্তীয় সক্রিয় নির্দিষ্ট খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ নিউট্রাসিউটিক্যাল খাবার সাধারণের পথ্য হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। লিখেছেন নয়াদিল্লির ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান সংস্থানের সুপ্রদীপ সাহা ও মতিয়ার রহমান খান।

নিউট্রাসিউটিক্যাল আসলে একটি পরিপূরক খাদ্যপণ্য। যা প্রধানত উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। এটিতে পুষ্টি এবং ঔষধি গুণ থাকে। ফলে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে খাদ্য সরবরাহ করার জন্য ভারতীয় কৃষির অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আমরা খাদ্য নিরাপত্তা পেলেও, পুষ্টি নিরাপত্তা একটি দূরের স্বপ্ন রয়ে গিয়েছে। উদ্যানজাত ফসল স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদানের জন্য নিউট্রাসিউটিক্যাল সরবরাহ করে তা অনেকের অজানা। মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা এবং যে কোনও রকম দুর্ভোগ কমানোর জন্য নিউট্রাসিউটিক্যালের একটি চমৎকার উৎস।

Advertisement

এই ধরনের জৈব সক্রিয় (বায়োঅ্যাকটিভ) যৌগগুলির মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড, অ্যান্থোসায়ানিন, পলিফেনল, ভিটামিন ইত্যাদি। পুষ্টি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণের কারণে শরীরে রোগের ঝুঁকি কমে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। পশ্চিমের দেশগুলিতে নিউট্রাসিউটিক্যাল সমৃদ্ধ খাবারের গ্রহণযোগ্যতা এবং ব্যবহার অনেক বেড়েছে। ফলে এই দেশগুলি থেকে এই জাতীয় খাদ্য পণ্যের রপ্তানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা বিশ্বে নিউট্রাসিউটিক্যালের বাজার বর্তমানে ২০২৩ সালে ৪১৮ বিলিয়ন ডলার এবং কমপাউন্ডেড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট ৫.৩%।

Advertisement

ফলে ২০৩৩ সালে আনুমানিক ৭০৩ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। বিশ্ব নিউট্রাসিউটিক্যাল বাজারের বৃদ্ধি এবং ভারতের সম্ভাবনা দেখে, বহুজাতিক এবং ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি এই ধরনের খাদ্যপণ্যের বাজার ধরতে উদ্যোগী হয়েছে। যেমন রিলায়েন্স ওয়েলনেস, ডাবর, আভেস্তাজেন, হিমালয়া, রানব্যাক্সি ল্যাবরেটরি, ডক্টর রেড্ডি ল্যাবরেটরি, উখার্ট, প্যারি নিউট্রাসিউটিক্যাল, জি এন সি ইন্ডিয়া, গ্লেনমার্ক, এবং গার্ডিয়ান লাইফ কেয়ার ইত্যাদি। এইসব দেশীয় সংস্থাগুলি নিউট্রাসিউটিক্যাল পণ্যের একটি বড় পোর্টফোলিও বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করছে।

[আরও পড়ুন: এবার পুজোয় বাজার কাঁপাবে ‘ডন’, ভারী বৃষ্টিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েই তৈরি রসনাতৃপ্তির নয়া উপাদান]

দেরিতে হলেও ভোক্তাদের আগ্রহের বিস্ফোরণ ঘটেছে। সুস্বাস্থ্য প্রদানকারী এবং শারীরবৃত্তীয়-সক্রিয় নির্দিষ্ট খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ নিউট্রাসিউটিক্যাল খাবার সাধারণের পথ্য হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিগত কয়েক বছরে, পুষ্টিহীনতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসারের মতো রোগ এবং অন্যান্য শারীরিক ব্যাধিগুলির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে নিউট্রাসিউটিক্যালগুলির ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। উচ্চমূল্যের ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে নিউট্রাসিউটিক্যাল থাকে।

তাছাড়া অন্যান্য জৈব সক্রিয় প্রাকৃতিক উপাদানের সমৃদ্ধ উৎস। এই ধরনের মূল্য সংযোজন পণ্যগুলি শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে না, বরং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক (ক্যানসারজনক পদার্থের বিরোধী), অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি (প্রদাহ বিরোধী), অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল (ব্যাক্টেরিয়া বিরোধী) , অ্যান্টি-প্রলিফারেটিভ (ক্যানসার কোষের প্রজনন বিরোধী) এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলির মাধ্যমে শরীরের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে, রোগ নিরাময় করে এবং প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও বাড়ায়।

উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলি ফ্রি রেডিক্যাল, ক্ষতিকারক অণুগুলি যা হৃদরোগ, অকাল বার্ধক্য, আলঝাইমার রোগ, অন্ধত্ব এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের কারণ হতে পার। এই ধরনের মারন রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। লিপিড পারঅক্সিডেশন (লিপিডের অক্সিডেটিভ অবক্ষয়ের প্রতিক্রিয়া) এবং অন্যান্য জৈবিক স্তরগুলির অযৌক্তিক অক্সিডেশন প্রতিরোধ করার জন্য তারা সুপারঅক্সাইড এবং হাইড্রক্সি রেডিক্যালগুলিকে অপসারণ করতে পারে।

যেহেতু পচনশীল সবজি এবং ফলের পণ্যের অল্প-সংবেদনশীল নিউট্রাসিউটিক্যাল সমৃদ্ধ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সতেজ থাকে, তাই এগুলি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অধিক পরিমাণে এই জাতীয় উপকরণগুলিকে অবশ্যই প্রক্রিয়াজাত করতে হবে এবং উন্নত সংরক্ষণ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে এবং পুষ্টির মানসহ মূল্য সংযোজিত পণ্যে রূপান্তর করতে হবে। নিউট্রাসিউটিক্যালের বাজার এখন ভারতে দ্রুত বাড়ছে। ভোক্তারা ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য-সচেতন হয়ে উঠছে এবং তাদের জীবনের ঝুঁকি পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে খাদ্যতালিকাতে সম্পূরকগুলির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছে।

যা ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস এবং আরও অনেক কিছুর ঝুঁকিতে সহায়ক হতে পারে। কোভিড মহামারীর পরে জনগণের কাছে এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ অতিমারিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে অনেকে উদ্বেগ ছিলেন। এই ধরনের স্বাস্থ্য সম্পূরক, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-স্ট্রেস ক্যাপসুলগুলি ওভার-দ্য-কাউন্টার পাওয়া যায় এবং ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন হয় না। পশ্চিমের দেশগুলিতে চিকিৎসার খরচ ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় ভোক্তারা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পছন্দ করতে শুরু করেছেন। কার্যকরী খাবারের আকারে বেশিরভাগ খাদ্যতালিকাগত পরিপূরকগুলি স্বাদহীন এবং তাদের অনেকগুলি ভারতে তৈরি হয় না।

অন্যান্য প্রধান বাধা হল অনেকগুলি তথাকথিত আশ্চর্য নিউট্রাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট যার ডোজ, কম্পোজিশন ইত্যাদির মতো মৌলিক বিবরণ দেওয়া হয় না। ফলে অনেকে এদের প্রয়োগ ও কার্যকারিতা বুঝতে পারেন না। শাকসবজি, ফলমূলের পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্যবহির্ভূত উৎস থেকে নিউট্রাসিউটিক্যাল তৈরি করা যেতে পারে। সবজির উৎসের মধ্যে গাজর, টম্যাটো, লাল মরিচ, বিট-মূল, ব্রকোলি, বেগুনি বাঁধাকপি ইত্যাদি প্রধান উৎস। ফলের মধ্যে ডালিম, কালো আঙুর, আমলা, জাম, তরমুজ, কলা ইত্যাদি। এছাড়াও কালো চাল, স্পিরুলিনা ইত্যাদি পুষ্টি উপাদানের উৎস। ফল এবং সবজি খেলে নিউট্রাসিউটিক্যাল পেতে পারি।

[আরও পড়ুন: অযোধ্যা পাহাড়ে ‘আম বিপ্লব’, ‘তাইল্যান্ড বারোমাসী’ প্রজাতিতে সারা বছরই রসনাতৃপ্তি]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ