তরুণকান্তি দাস, ভাটাপাড়া(বিলাসপুর): সরাসরি হুমকি! তাঁর দলের সভাপতি অমিত শাহ যে সুর চড়িয়েছিলেন, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি গর্জালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মাও হামলায় তাঁর দলের বিধায়কের মৃত্যুর পিছনে তিনি কংগ্রেসের ‘পাঞ্জা’ দেখছেন। তাঁর মতে, দেশের সর্বত্র রাষ্ট্রদ্রোহ বাড়াতে কংগ্রেস যে মদত দিচ্ছে, বস্তারের দান্তেওয়াড়ায় বিধায়ক খুন তারই পরিণাম। নকশালদের প্রতি কংগ্রেসের নরম মনোভাব, দেশকে টুকরো করতে চাওয়া প্রতিটি শক্তির সঙ্গে সুমধুর সমঝোতা, যার মূল্য চোকাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই। মঙ্গলবার কোড়বার যেখানে দাঁড়িয়ে তোপ দেগেছেন মোদি, সেই এলাকাও মাওবাদী অধ্যুষিত।
[আরও পড়ুন-হাই কোর্টের নির্দেশে ভারতে টিকটক অ্যাপ নিষিদ্ধ করল গুগল]
এখান থেকে ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরের অদূরে ভাটাপাড়ায় পৌঁছে আরও কড়া ভাষায় কংগ্রেসের ‘পরিবারতন্ত্র‘-কে বিঁধে বলেছেন, “একটা পারিবারিক দল, যে কোনওভাবে দেশের ক্ষমতায় থাকতে চায়। জওয়ানদের বলিদানকে বিদ্রুপ করে। তবে আমরা ফের আসছি। তারপর দেশদ্রোহীদের হিসাব কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেওয়া হবে।”
[আরও পড়ুন-বিজেপিকে হঠাতে কী পরিকল্পনা বামেদের? অকপট কাশ্মীরের বিধায়ক]
কোড়বা একেবারেই কাঁকের, রাজনন্দগাঁওয়ের মতো পুরোপুরি মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা। কাঁকেরের জেলা সংশোধনাগারে রাজ্যের সবচেয়ে বেশি মাওবাদী জঙ্গি বন্দি রয়েছে। রাজ্যের দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ছত্তিশগড়ের এই এলাকার পাশাপাশি রয়েছে মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট ও মান্ডলা আসন। যেখানে মাওবাদী স্কোয়াডের একাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
[আরও পড়ুন-নেতার আত্মীয়ের বাড়িতে উদ্ধার ১২ কোটি টাকা, ভোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কমিশনের]
এসব এলাকার জনগণের মধ্যে দাঁড়িয়েই মাওবাদীদের সঙ্গে কংগ্রেসকে মিলিয়ে দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক রণকৌশল ঘিরে হইচই পড়ে গিয়েছে। কারণ, তিনি তির ছুড়েছেন বর্তমান কংগ্রেস সরকারের বুকে। বলেছেন, “আমাদের কড়া পদক্ষেপে হিংসাশ্রয়ী অতিবাম শক্তি যখন আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়তে বাধ্য হচ্ছিল, তখন নতুন সরকারের নরমপন্থা তাদের ফের মানুষ খুনে উৎসাহী করছে। কংগ্রেস গত বিধানসভা নির্বাচনে এখানে প্রচারে নেমে মাওবাদীদের ‘ক্রান্তিকারী‘ বলেছিল। আজ বিজেপি বিধায়ককে খুন করে কংগ্রেসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে ওরা। কংগ্রেসের হাত ওদের পিছনে। তাই ওরা আরও মরিয়া। ভয়হীন!” এরপর আরও বড় বিস্ফোরণ, “দিল্লির তুঘলক রোডে এক নেতার বাড়ি থেকে ভোটের সময় কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে কংগ্রেসে।”
[আরও পড়ুন-নেতার আত্মীয়ের বাড়িতে উদ্ধার ১২ কোটি টাকা, ভোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কমিশনের]
মাওবাদীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তড়িঘড়ি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ছত্তিশগড়ের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল। বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, “আমরা তো কয়েকমাস ক্ষমতায় এসেছি। তার আগে ১৫ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। তারপরও বস্তারে এত সমস্যা কেন? বিধায়ক ভীমা মাণ্ডবী খুন নিয়ে ভোটের আগে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে নেমেছেন অমিত শাহ-নরেন্দ্র মোদি।”
[আরও পড়ুন-সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিলেন শত্রুঘ্ন সিনহার স্ত্রী, লড়তে পারেন রাজনাথের বিরুদ্ধে]
এর আগে অমিত শাহ এসে সরাসরি ওই খুনের সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন। তারপরই ড্যামেজ কন্ট্রোলে রাজ্য বিচারবিভাগীয় তদন্তের অনুমতি চেয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে। এবার এই বিষয় নিয়ে সরাসরি কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “কংগ্রেসের ইস্তেহারেই তো মাওবাদী-নকশাল-দেশদ্রোহীদের মদত দিতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন লঘু করার কথা বলা আছে। বলছে, ক্ষমতায় এলে ওই আইন হঠিয়ে দেবে। তার মানে ছত্তিশগড় নয়, দেশের যেখানে নকশাল-সংগঠন আছে সর্বত্র তাদের হিংসাশ্রয়ী কার্যকলাপ বাড়বে। দেশবিরোধী জঙ্গিরা মদত পাবে। কাশ্মীর নিয়ে ওদের ভূমিকা দেখুন। কংগ্রেসের হাত বিকাশের নয়, দেশের বিনাশের। দেশ ভাঙার। আমরা আর ল্যান্ডমাইন চাই না। জলের লাইন, বিজলির লাইন চাই। দেশের জন্য ‘জান হাথেলি পে’ রাখা জওয়ানরা মরছে আর কংগ্রেস তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন করছে। ওরা বলছে মোদি কারও নামের সঙ্গে জোড়া থাকলেই সে চোর। তা কি বাস্তবসম্মত?”
বাঙালি অধ্যুষিত বিলাসপুর ও ভাটাপাড়া বিখ্যাত ডালকলের জন্য। মুগ-মসুর-অড়হর, সবকিছুরই জোগানদার এখানকার কারখানা। তাই বাঙালির আবেগ উসকে দিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, “আপনারা এখানে এসেছেন। আপনাদের ভালবাসা ভুলব না। আপনাদের রাজ্য বদলে যাচ্ছে। আবার মোদি সরকার আসছে। ২০২০ সালের মধ্যে দেশের সব গৃহহীনের পাকা বাড়ি করে দেব। এবং কংগ্রেসকে আপনারা ক্ষমতার কথা ভুলিয়ে দেবেন।”