সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির।’ কবিগুরুর কবিতা উদ্ধৃত করেই ১৭তম লোকসভার প্রথম যৌথ অধিবেশন শুরু করলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। জানালেন, নতুন ভারত চলবে রবীন্দ্রনাথের আদর্শেই।
[আরও পড়ুন- মুম্বইয়ের ধাঁচে হামলার ছক কষছে আইএস, কেরলে জারি চূড়ান্ত সতর্কতা]
বৃহস্পতিবার বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী ও নব নির্বাচিত সাংসদদের অভিনন্দন জানান তিনি। বলেন, “নব নির্বাচিত সাংসদদের অভিনন্দন। প্রধানমন্ত্রীকেও আমার আন্তরিক অভিনন্দন। এবার সমাজের সবস্তরের প্রতিনিধিরা এসেছেন সংসদে। দেশের মানুষ অগ্রগতির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাই জাতপাত নয়, সৌভ্রাতৃত্ব চাই। দেশের মানুষকে বন্ধনমুক্ত রাখতে চাই। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তেই কাজ করবে সরকার। সবার উন্নতির জন্য কাজ করবে। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ ও সবকা বিশ্বাসের ভর করেই এগোবে। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর তারা। সেই লক্ষ্যে রাজ্য সরকারগুলিকে নিয়ে কাজ করবে। আগামী দিনের উদ্যমী ভারত গড়ে তুলতে সবরকম চেষ্টা চালাবে। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে নতুন চেহারায় দেখা দেবে ভারত। এবারের নির্বাচন মহিলারা বেশি ভোট দিয়েছেন। নারী সুরক্ষার বিষয়ে জোর দেওয়ার ফলেই সামনে এগিয়ে আসছেন তাঁরা। এই বিষয়ে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। তাঁদের স্বার্থেই তিন তালাক প্রথা ও নিকাহ হালালা-র বিলোপ প্রয়োজন। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরকার যে তাঁদের সঙ্গে আছে তা বুঝতে পারছেন মানুষ। তাই এবারের নির্বাচনে স্পষ্ট মতামত দিয়েছেন ৬১ কোটিরও বেশি ভোটার। যা নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে।”
ভোটের আগে দেশজুড়ে কৃষক অসন্তোষের জেরে অপ্রস্তুত পড়তে হয়েছিল মোদি সরকারকে। এবার যে আগে থেকেই সেই সমস্যা সমাধানে তারা উদগ্রীব তা বোঝা গেল রাষ্ট্রপতির উদ্বোধনী ভাষণে। প্রথমবারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যেই কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে বলে জানালেন তিনি। বললেন, “কৃষকদের উন্নয়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সরকার। তাই কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধিতে ২৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা হবে। সমস্ত কৃষককে ‘কৃষকনিধি’ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। এর জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। স্বচ্ছ ভারতের পর জল সংরক্ষণকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এর জন্য নেওয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ। সমস্যা সমাধানের জন্য দেশের প্রতিটি পঞ্চায়েত প্রধানকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। জল বন্টনের বিষয়ে তাঁদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন। দেশজুড়ে খরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতের জন্য জল সংরক্ষণ করাই মূল লক্ষ্য সরকারের। এর জন্য তৈরি হয়েছে জলশক্তি মন্ত্রক। মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশ দ্বিতীয় স্থানে আছে। কিন্তু, চাইলেই প্রথম স্থান অধিকার করতে পারে। জলসম্পদের সঠিক ব্যবহার হলেই সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।”
[আরও পড়ুন- নির্বাচনী প্রচারে মাত্রাতিরিক্ত খরচ, সাংসদ পদ হারাতে পারেন সানি দেওল!]
বৃহস্পতিবার কালো টাকা উদ্ধারের বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। এই বিষয়ে আগের থেকে অনেক বেশি তথ্য জানা গিয়েছে বলেও জানান। শক্তিশালী ভারত গড়তে নতুন সরকারের আমলে কর সংস্কারের পাশাপাশি জিএসটি সরল হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। সেই সঙ্গে দেশের পিছিয়ে থাকা ১১২ জেলার দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। গ্রামগুলিতে ব্যাংকিং পরিবেষা পৌঁছে দিতে ডাকবিভাগকে ব্যবহার করা হবে বলেও জানান। ছোট দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় নতুন সরকার যে আগের পথেই চলবে তাও আজ স্পষ্ট করেন রাষ্ট্রপতি। বলেন, “এয়ার স্ট্রাইকের ফলে ভারতের শক্তি সম্পর্কে বিশ্বের কাছে একটা বার্তা গিয়েছে। মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী অভিহিত করার ঘটনা তারই ফলশ্রুতি। দেশের বাইরে ও ভিতরে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম রুখতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য দেশের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মাওবাদীরাও। নতুন সরকারও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় একই পথে চলবে।”
এক দেশ, এক নির্বাচন নিয়ে নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগেরও আজ প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, “এটাই এই সময়ের চাহিদা। এক দেশ, এক নির্বাচন চালু হলে দেশের মানুষের উপকার হবে। কারণ, বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন হওয়ার ফলে উন্নয়নের কাজ থমকে যায়।”
Delhi: President Ram Nath Kovind begins his address of the joint session of both the Houses at the Parliament. pic.twitter.com/hcqauYbyxZ
— ANI (@ANI) June 20, 2019