সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। উন্নাওয়ে নির্যাতিতার শেষকৃত্য ঘিরে নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন পুলিশ সুপার বিক্রান্তবীর সিং। সমাধিস্থলে জনসমাগম দেখে তিনি রুষ্ট হয়েই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন – ‘এখানে কি ফিল্মের শুটিং চলছে?’ তাতেই আরও ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের বিরুদ্ধে ফের অভিযোগ তুলেছেন। পুলিশের উপর যেটুকু ভরসা সবে করতে শুরু করেছিলেন গ্রামের জনতা, তাঁরাই আবার মুখ ফিরিয়ে নিলেন। জীবনযুদ্ধ সমাপ্তির পরও যেন নিষ্কৃতি পাচ্ছেন না অগ্নিদগ্ধ মেয়েটি।
দাবি ছিল, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সশরীরে তাঁদের গ্রামে না গেলে উন্নাওয়ের নির্যাতিতার শেষকৃত্য করা হবে না। যোগী আদিত্যনাথ গেলেন না, গিয়ে পৌঁছলেন পুলিশ সুপার-সহ উচ্চপদস্থ কর্তারা। আর দিলেন একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি। নির্যাতিতার বোনকে সরকারি চাকরি, পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া ছাড়াও গ্রামের নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করেন পুলিশ আধিকারিকরা।তাতেই ভাঙে অনড় অবস্থান। তবে পরিবার এও সাফ জানিয়ে দেয়, এসবেরও আগে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে খুব কম সময়ের মধ্যে। ২৩ বছরের নির্যাতিতার দেহ সমাধিস্থ করার জন্য জড়ো হন পরিবারের সদস্যরা।
[ আরও পড়ুন: অপরাধীদের মন পরিবর্তনের জন্য জেলে গো-সেবার পরামর্শ মোহন ভাগবতের ]
আর সেখানেই জন্ম নিল নতুন বিতর্ক। এত জনসমাগম দেখে রুষ্ট পুলিশ সুপার বিক্রান্তবীর সিং বলে বসেন, ‘এখানে কি ফিল্মের শুটিং চলছে?’ তাঁর এই মন্তব্যে প্রবল অপমানিত বোধ করেন নির্যাতিতার স্বজন এবং গ্রামবাসীরা। তাঁরাও পালটা খেপে ওঠেন। শেষমেশ অবশ্য পুলিশ বাহিনীর প্রহরাতেই সমাধিস্থ করা হয় তাঁকে। শরীরের বেশিরভাগটা পুড়িয়ে দিয়েছিল অগ্নি। বাকিটা মিশে গেল মাটিতে। তেইশ বছরের তরতাজা জীবন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল ইহজগৎ থেকে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি সকলেই মনে মনে প্রার্থনা করলেন, আর যেন এমনটা দেখতে না হয়।
শুক্রবার রাতে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ৯০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় উন্নাওয়ের এই তরুণীর মৃত্যুর পরদিন বিমানে তাঁর দেহ পৌঁছয় গ্রামের বাড়িতে। রাত ৯ টায় উন্নাওয়ের সেই গ্রামে যেন আঁধার আর ঘন হয়ে এল। রবিবার শেষকৃত্যের আগে তরুণী পরিবার বেঁকে বসে জানায়, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের গ্রামে গিয়ে যথাযথ বিচার এবং নিরাপত্তার আশ্বাস না দিলে দেহ সমাধিস্থ করা হবে না। দীর্ঘক্ষণ ধরে এই জেদেই অনড় ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল প্রশাসনের কাছেও।
[ আরও পড়ুন: “অন্যায় করলে এনকাউন্টার হবেই”, সাফ কথা তেলেঙ্গানার মন্ত্রীর]
কিন্তু দিনের প্রথমার্ধ্ব কাটার পর গ্রামে গিয়ে পৌঁছয় উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের একটি দল। তাঁরা প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন, বোঝান, নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করেন। তারপর আপাতভাবে জট কাটলেও, পুলিশ সুপারের মন্তব্যের জেরে গ্রামবাসীরা মনে করছেন, পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি।আমজনতার প্রতি পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি যেমন ছিল, তেমনটাই রয়েছে।