সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ফেলে দেওয়া মাছের আঁশ থেকে গয়না, অলংকার। সেই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে মূর্তি ও ঘর সাজানোর জিনিসও। বিকোচ্ছেও মন কাড়া দামে। অবিশ্বাস হলেও সত্যি! পুরুলিয়ার জয়পুর ব্লকের স্বনির্ভর দলের এমন গয়না তৈরি ইমিটেশনের বাজারে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মাত্র কুড়ি-পঁচিশ টাকাতেই মিলছে কানের দুল, লকেট। সেই সঙ্গে এই গয়না ও গৃহস্থালির জিনিসপত্র তৈরি করে আয়ের পথও খুলেছেন তারা। আক্ষরিক অর্থেই সাবলম্বী হয়েছে জঙ্গলমহলের এই ব্লকের স্বনির্ভর দলের সদস্যরা।
রাজ্যের আনন্দধারা প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে তাঁরা এই কাজ করছেন। তাঁদের হাতে তৈরি এই পণ্যের বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাও করেছে প্রশাসন। জয়পুর ব্লকের অপরাজিতা সংঘ সমবায় সমিতি লিমিটেডের অধীনে থাকা একাধিক স্বনির্ভর দল গত তিন মাস ধরে এই কাজ করছে। এই প্রথম ওই পণ্য পুরুলিয়া জেলা সবলা মেলা ও ক্রেতা সুরক্ষা মেলাতে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ক্রেতাদের চোখ টানছে আঁশ থেকে তৈরি কানের দুল, লকেট, মূর্তি-সহ ঘর সাজানোর নানান জিনিস। তবে এই কাজ করতে কম কাঠ-খড় পোড়াতে হচ্ছে না অপরাজিতা সংঘের অধীনে থাকা স্বনির্ভর দলগুলিকে।
[আরও পড়ুন: বন্দিরা তৈরি করছে মধুবনী শাড়ি, চরম ব্যস্ততা বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে]
কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছে এই গয়না? স্বনির্ভর দলের সদস্যদের কথায়, কিছু পয়সা দিয়ে তারা মাছের আঁশ সংগ্রহ করছেন। তারপর তা মিউরিক অ্যাসিড দিয়ে ধুয়ে আবার সাবান গুঁড়ো দিয়ে ধুতে হচ্ছে। জল ছেঁকে নিয়ে তা কিছুক্ষণ রোদে শুকিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী আঁশ কেটে রং দিয়ে, সেখানে নকশা করে প্রস্তুত করা হচ্ছে গয়না, নানান অলংকার-সহ গৃহস্থালি জিনিস। এক-একটি আঁশ নিয়ে নানান অবয়বে শিল্পকলা ফুটিয়ে তুলে তা ফ্রেমবন্দি করেও বিক্রি করছে। ওই সংঘের তরফে রেখা লাহা, কল্পনা কৈবর্ত বলেন, “এই অলংকারগুলি যে মাছের আঁশ দিয়ে তৈরি তা একেবারেই বোঝা যাচ্ছে না। বিক্রির সময় মানুষজনকে তা বললে ক্রেতাদের মধ্যে এই অলংকার কেনার উৎসাহ আরও বাড়ছে।”
এক একটি কানের দুল তৈরি করতে খরচ পড়ছে পাঁচ টাকা। তা তারা বিক্রি করছেন কুড়ি থেকে পঁচিশ টাকায়। একই ভাবে নানান ফুল-সহ ঘর সাজানোর জিনিস তৈরিতে যেখানে দশ থেকে কুড়ি টাকা খরচ হচ্ছে। তা তারা অনায়াসেই ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করে মোটা টাকা আয় করতে পারছেন। ছোট মূর্তি তৈরিতে যেখানে ৫০-৬০ টাকা খরচ সেখানে তা বিক্রি হচ্ছে দেড়শ টাকায়।
[আরও পড়ুন: ছোট চুলের স্টাইল নিয়ে চিন্তা? এই কায়দায় সাজলে তাক লেগে যাবে সব্বার ]
জয়পুর ব্লকের বিডিও বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “এই কাজ করতে আমরা স্বনির্ভর দলগুলিকে প্রশিক্ষণ দিই। জাতীয় গ্রামীন জীবন-জীবিকা মিশন অর্থাৎ আনন্দধারা প্রকল্প থেকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমরা তাদের এই পণ্য বাজারজাতকরণেরও ব্যবস্থা করছি।”
ছবি- সুনীতা সিং