ওরা থাকে এক নিজস্ব জগতে, নিজের নিয়মে। হাজার কথা বলেও বাগে আনা যায় না অটিস্টিক শিশুর মন। জিনঘটিত এই অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ঝুঁকি কমাতে প্রেগনেন্সিতেই জরুরি সতর্কতা। বাবা-মাকে গর্ভস্থ শিশুর সঙ্গে গল্প করার পরামর্শ দিলেন আইভিএফ ইনফার্টিলিটি হসপিটালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: বিপ্লব দেব। লিখছেন পৌষালী দে কুণ্ডু৷
অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চার সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুর তিন বছর বয়স হওয়ার পর বোঝা যায় এই সমস্যা। অটিজম আক্রান্তদের ব্রেনের গঠন ও বুদ্ধির বিকাশ একদম ঠিকঠাক হয়। সমস্যা যেটা, তা হল এই বাচ্চারা অন্য কারও সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চায় না, সাড়া দেয় না। চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। নিজের জগতে থাকে। কেউ এক কথা বারবার বলে। মনের ভাব প্রকাশ করতে চায় না। নিজের দৈনন্দিন কাজ করতে পারে না। এমনই হরেক রকমের ব্যবহারিক সমস্যা। চিকিৎসার পরিভাষায় ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার’ আসলে ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার।’ মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোন ক্ষরণ ঠিকমতো না হওয়ায় এমন হয়। বর্তমান সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, প্রতি ৮৮ জন শিশুর মধ্যে একটি শিশু অটিজমে আক্রান্ত। কেন হয় অটিজম? কীভাবে এর প্রতিরোধ সম্ভব? এই প্রশ্নে মন আশঙ্কিত হতেই পারে হবু বাবা,মায়েদের।
প্রতিরোধে আগাম সতর্কতা
গর্ভস্থ শিশুর ভ্রূণ দেখে বলা সম্ভব নয় যে বাচ্চাটি ভবিষ্যতে অটিজম আক্রান্ত হবে কি না। অর্থাৎ প্রেগন্যান্সির সময় যতই উন্নততর আলট্রাসোনোগ্রাফি করা হোক না কেন এটি ধরা পড়ে না। তাই অটিজম যাতে না হয় তার সম্ভাবনা কমাতে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার আগেই কয়েকটি বিষয়ের উপর নজর রাখতে হবে।
জেনেটিক কাউন্সেলিং – ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের আগে ডাক্তারের জেনেটিক কাউন্সেলিং করা উচিত। জেনে নিতে হবে বাবা—মায়ের আগের সন্তানের অটিজম আছে কি না বা বাড়িতে কারও আছে কি না। যদি কারও প্রথম সন্তানের অটিজম থাকে তাহলে দ্বিতীয় সন্তানের অটিজম হওয়ার ঝুঁকি ৩—৮ শতাংশ থাকে। যার দু’টি সন্তানই অটিস্টিক তাঁর তৃতীয় সন্তানেরও এমন হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ। এসব ক্ষেত্রে এই ঝুঁকির সম্ভাবনা দেখে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই গর্ভধারণের পরিকল্পনা করা উচিত।
পরিবেশগত কারণ – এক্ষেত্রে ডাক্তারকে জেনে নিতে হবে হবু বাবা-মায়ের পরিবারে কারও মানসিক অবসাদ, অ্যাংজাইটি আছে কি না।
বাবা,মায়ের বয়স – প্রথম প্রেগন্যান্সির সময় মায়ের বয়স যদি ৩৫-এর উপর হয় আর বাবার বয়স ৩৯-এর বেশি হয় তাহলে ভাবী সন্তানের অটিজম আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যায়।
বাবা,মায়ের বেড়ে ওঠা – দু’জনে কোথায় বড় হয়েছে, একই পরিবেশে বেড়ে উঠেছে কি না — এমনই সব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। বাবা—মা যদি আলাদা দেশের নাগরিক হন, আলাদা ভৌগলিক পরিবেশে বড় হন তাহলেও বিপদ। কীরকম? সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ভারতের মহিলা আমেরিকায় গিয়ে বসবাস করে সেখানকার ছেলেকে বিয়ে করে তাহলে তাদের সন্তানদের অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে ভিন দেশের পরিবেশে এসে মেয়েটির কিছু জেনেটিক পরিবর্তন হয়। যার প্রভাবে অটিজম হতে পারে।
এছাড়া মায়ের কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডজিম, ডায়বেটিস, ওবেসিটি, প্রেগন্যান্সিতে রক্তচাপ বেড়ে গেলে অটিজমের ঝুঁকি বেশি। তাই আগে এগুলি কন্ট্রোল করে সন্তানধারণের পরিকল্পনা করা উচিত।ম্যাটারনাল এক্সপোজার টু হাইপোথ্যালামাইট-সহ কিছু ওষুধের সাইডএফেক্ট হিসাবে অটিজম হতে পারে। তাই প্ল্যানিং থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে তবেই যে কোনও ওষুধ খাওয়া উচিত। বাবা-মায়ের কারও মৃগী থাকলে বা মৃগীরোধী ওষুধ খেলেও বাচ্চার অটিজম হতে পারে। তাই সাবধান।
প্ল্যানিংয়ের শুরু থেকেই মায়েরা ভিটামিন ডি ও ফলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করুন। ভিটামিন ডি—এর অভাব থাকলে কিন্তু অটিজম প্রবণতা বাড়ে। কোনও বাচ্চার অটিজম ধরা পড়লে অবশ্যই তাকে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দিন। এতে তার সমস্যা কিছুটা কমে। প্রেগন্যান্সির সময় মায়ের যদি সিএমভি ভাইরাস ইনফেকশন বা রুবেলা ইনফেকশন হয় তাহলে গর্ভস্থ শিশুর অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
সময়ের আগেই শিশুর জন্ম হলে, শিশুর ওজন অনেক কম হলে, যমজ ভ্রূণ থাকলে, অতীতে একাধিক মিসক্যারেজের ইতিহাস থাকলেও সন্তানের অটিজমের ঝুঁকি থাকে। তাই সেই বুঝে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া বাচ্চা যখন জন্মাচ্ছে তখন তার শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ অনেক কম থাকলে সতর্ক হোন। এক্ষেত্রে শিশুর সেরিব্রাল পলসি ও অটিজম হতে পারে।
অটিজম এড়াতে সতর্ক হোন
গর্ভাবস্থায় সুন্দর গান শুনুন। গর্ভস্থ শিশুর সঙ্গে বাবা-মা কথা বলুন। ওরা কিন্তু শুনে গলা চিনতে পারে। এবং নড়াচড়ার মাধ্যমে সাড়াও দেয়। এই অভ্যাস তৈরি হওয়া ভীষণ দরকার। এতে অটিজমের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
পরামর্শ : ৯৩৩৯৫১২২৭৭
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.