Advertisement
Advertisement

Breaking News

Personal Finance

ভূতের ভবিষ্যৎ

ক্রেডিট স্কোর’ তো কমবেই, স্তিমিত হবে আগামী দিনে নতুন লোন পাওয়ার সম্ভাবনা।

Beware of uncalculated loans, yoou might end up in financial bog | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:June 9, 2023 5:17 pm
  • Updated:June 9, 2023 5:17 pm

যারা লোন নিয়ে বাড়ি কিনি, বা উচ্চশিক্ষায় খরচ করি, যদি ‘ডিফল্ট’ হয়, কী দুর্ভোগ বলুন তো! ‘ক্রেডিট স্কোর’ তো কমবেই, স্তিমিত হবে আগামী দিনে নতুন লোন পাওয়ার সম্ভাবনা। তৎসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চোখরাঙানি, আইনি সমস‌্যা। ভাল, মনপসন্দ শর্তে লোন এই কারণে অনেকেই পাই না, কারণ অতীত ডিফল্টের ভূত বর্তমানেও তাড়া করে। কলমে নীলাঞ্জন দে

 

Advertisement

সাধারণ ট‌্যাক্স-পেয়ার যারা, তাদের ভরসা যে কেবল ভগবান- তা তো সবাই জানে। সরকার যখন ট‌্যাক্স আর নতুন করে বসাতে চায় না, তখন একটাই বড়সড় রাস্তা খোলা- ধার করা। সেজন‌্যই দেশের সবথেকে বড় ‘স্পেন্ডার’, মানে ‘খরুচে’ হল সরকার। এবং সরকার-ই হল সবথেকে বড় ‘বরোয়ার’, মানে ‘ধার করনেওয়ালা’। যে কোনও প্রাইভেট ব‌্যবসায়ী গোষ্ঠীর থেকে ধার নেওয়ার বেলায় বেশি সুযোগ থাকে সরকারেরই। ব‌্যাংকিং ব‌্যবস্থার বৃহত্তম গ্রাহক সরকার, ব‌্যাংক নিয়ন্ত্রক সক্রিয়ভাবে সরকারি নীতি রূপায়ণ করে থাকে এই নিরন্তর ধার নেওয়া এবং শোধ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালানোর জন‌্য। দেশের সাধারণ নাগরিক এই বিষয়টা বিলক্ষণ জানে।

Advertisement

আমরা বেশ বুঝি, ‘ধার’ নেওয়ার ফল কী হতে পারে, বিশেষত যদি ইন্টারেস্ট পেমেন্টের ভূত ঘাড় থেকে না-নামে। বা পুরনো ধারের না-দেওয়া সুদ, ‘পেনাল’ ইন্টারেস্ট সহযোগে বোঝার ভার বাড়িয়ে তোলে। কাজেই ধার করতে হয় অতি সন্তর্পণে, কারণ সরকারের ক্ষেত্রে ধার নেওয়া টাকা খরচ করা হয় ডিমান্ড বা চাহিদা বাড়িয়ে তোলার উদ্দেশ্যে। এর খারাপ দিকটা হচ্ছে, এমন নীতি অনেক সময় মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে তোলে। অবশ‌্য বহু ভাল দিকও আছে, তাও বলে রাখা উচিত।

আমাদের দেশে ‘ইনফ্লেশন’ ইতিমধ্যেই খুব ক্ষতিকারক রূপে দেখা দিয়েছে। ইদানীং মুদ্রাস্ফীতির হার কিছুটা কমলেও অর্থনীতির নানা কোণে তার ছাপ স্পষ্ট। তবে রিজার্ভ ব‌্যাংক এই মুহূর্তে ‘রেপো রেট’ পরিবর্তন করা থেকে বিরত আছে বলেই অনুমান। অতএব, সামগ্রিকভাবে সুদের হার হয়তো এখনই আর বাড়বে না। সাধারণ ব‌্যাংক গ্রাহক- যদি সে লোন নিয়ে থাকে, অসুবিধায় পড়বে না, কারণ ইএমআই-জনিত খরচ বাড়ানো হবে না। এবং যদি সে ডিপোজিটর হয়ে থাকে, তাহলে তার উপার্জিত সুদের হারও বদলানো হবে না। গত কয়েক কোয়ার্টারে ক্রমাগত বৃদ্ধির ধারাটি এখন মন্থর হয়ে আসায়, অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও স্থিতাবস্থা থাকবে, এমনটাই আশা করা যায়।

এ তো গেল একটা দিক, অর্থাৎ ভারতের কথা। মার্কিন মুলুকে কিন্তু সাজ-সাজ রব- কারণ ‘ডেট সিলিং’ সেখানে এক বিরাট বিতর্কের দরজা সপাটে খুলে দিয়েছে। মনে রাখতে হবে, তুলনায় ছোট অন‌্যান‌্য দেশের মতো আমেরিকায় পেমেন্ট নিয়ে বড় প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনা নেই।

অনেক দেশের ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ’ মার্কিন ডলার ধরে রাখে। বিশ্বের বহু স্থানে ডলারের গ্রহণযোগ‌্যতা এখনও অটুট, মার্কিন কারেন্সির কদর ব‌্যাংকিং মহলে প্রায় সর্বত্র। তাই সে দেশের সরকার যদি মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত খরচ করে ফেলে, তা নিয়ে খুব একটা জলঘোলা হয় না। এমন অতিরিক্ত খরচ আমেরিকান কর্তৃপক্ষ একাধিক বার করেছে, সেখানেও ‘ফিসক‌্যাল ডেফিসিট’ (‘গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট’ বা ‘জিডিপি’র অংশ হিসাবে বা অনুপাতে) দুর্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে। গত ১০০ বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে বুঝবেন- ১৯২৯-এর তথাকথিত ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’-এর সময় ডেফিসিট জিডিপির অনুপাত ছিল প্রায় ৪০ শতাংশর আশপাশে। আবার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী অধ‌্যায়ে তার উত্থান হয়েছিল প্রায় ১০০ শতাংশ। আরও সাম্প্রতিক কালের উদাহরণ দিতে হলে বলতে হয়, ২০০৮-এর ক্রাইসিসের কথা। স্মৃতিতে এখনও টাটকা সেই পর্যায়ের নেপথ্যে ছিল অগণিত নাগরিকের ধার করার অভ‌্যাস। ব‌্যাংকিং সিস্টেমের কাছ থেকে টাকা কর্জ করে বাসস্থান কেনা বা তৈরি করা খুবই চালু এক প্রথা। সেই প্রথা থমকে দাঁড়ায় যখন লোন শোধের প্রক্রিয়া ব‌্যাহত হয়, রিপেমেন্ট আটকে যায়। যেমন হয়েছিল ২০০৮-এর ক্রাইসিসে। ফল: সরকার স্রোতের মতো টাকা ঢেলেছিল পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে এবং লেন্ডারদের ক্ষতি আটকাতে। অর্থনীতির মাথাব‌্যথা বাড়িয়ে লেন্ডারদের ডেট মিশে গিয়েছিল সরকারি ডেটের মূল ধারায়।

ট‌্যাক্স-জনিত বা অন‌্য উপার্জন থেকে যখন ধার মেটানো মুশকিল হয়ে পড়ে, তখন অমোঘ এক পদক্ষেপ করাই স্বাভাবিক। বুঝতেই পারছেন, কীসের কথা বলছি। হ্যাঁ, নতুন ধার নিয়ে পুরনো লোনের সেই অপ্রীতিকর পদক্ষেপ। তাই-ই করা হয়েছে, এবং মার্কিন দেশের ফেডারেল ডেট চড়চড়িয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ শতাংশে চলে এসেছে সেই কর্জের বোঝা! কিন্তু খরচের হাত গুটিয়ে বসে থাকলে সরকারের চলবে না, তাই না? এক্সপেনডিচারের ঝোঁকে বেড়েছে যে কোনও ব‌্যাংক নিয়ন্ত্রকের চিরায়ত শত্রুর প্রাদুর্ভাব, তথা ক্ষমতা। এককথায়- ডেফিসিট।

‘ডেফিসিট’ নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলতে চাই না, তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক হিসাবে আমরা এর সঙ্গে বিলক্ষণ পরিচিত। শুধু বলে রাখি, যুক্তরাষ্ট্রে ‘অ‌্যাকাউন্টেবিলিটি অফিস’-এর রিপোর্ট পেশ করে পরিস্থিতির সার্বিক আলোচনা করেছে। তাতে পরিষ্কার যে, ‘সোশ‌্যাল সিকিউরিটি’ এবং ‘পাবলিক হেল্‌থ’- এই দুইয়ের ধাক্কাটা এবার বেশ জোরালো। এর সঙ্গে যোগ হয় পুরনো ধারের খাতে ইন্টারেস্ট পেমেন্ট। সামগ্রিক ডেটের ভার এবার জিডিপি ছুঁই ছুঁই। ব‌্যবস্থা না-নিলে, সঠিক পদক্ষেপের অভাবে, তা জিডিপি ছাড়িয়ে যেতে বাধ‌্য। একটা হিসাব বলছে, জিডিপির বৃদ্ধি যদি বছরে আনুমানিক ২ শতাংশ হয়, তাহলে ডেটের বাড়বাড়ন্ত হবে মোটামুটিভাবে ৪-৫ শতাংশ। এদিকে টাকা আমদানি, মানে সরকারি উপার্জন যা ট‌্যাক্স থেকে পাওয়া যায়, তা প্রায় সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে।

এই অবধি তো হল আগামী কয়েক বছরের চিত্র। ধারণার পরিধি যদি একটু বাড়িয়ে এই শতাব্দীর শেষ প্রান্তে নিয়ে যাওয়া যায়- তখন দেখবেন সত্যিই জটিল পরিস্থিতি! রেভিনিউতে স্থিতাবস্থা, কিন্তু এক্সপেনডিচার বেড়েছে। হু হু করে বেড়েছে ইন্টারেস্ট পেমেন্টের দায়ভার। বস্তুত, এই ইন্টারেস্ট পেমেন্টই বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে সমগ্র অর্থনীতিকে।

এজন‌্য ‘ডেট সিলিং’, যার উল্লেখ করেছি আগেই, এত ভারিক্কি এক প্রসঙ্গে। ‘মার্কিন ট্রেজারি’ ইতিমধ্যে নতুন কর্জ করে অতীতের ধার সামলাচ্ছে। ইন্টারেস্টও মেটানো হচ্ছে এই পদ্ধতিতে। আমেরিকান কংগ্রেস যদি ডেট সিলিং না বাড়ায় তাহলে রিপেমেন্টের প্রক্রিয়ায় ছেদ পড়বে। সম্ভাবনা হবে ডিফল্টের। ‘ডিফল্ট’- একথা তো সবাই মানবেন- ঋণপত্রের বাজারে এক বিরাট সর্বনেশে কথা।

সর্বনেশে তো বটেই। সাধারণ জীবনযাত্রায় আমরা যারা অভ‌্যস্ত, লোন নিয়ে বাড়ি কিনি, বা সন্তানের উচ্চশিক্ষায় খরচ করি, আমাদের নিজস্ব পরিসরে ডিফল্ট যদি হয়, কী দুর্ভোগে পড়তে হয় বলুন তো! ‘ক্রেডিট স্কোর’ তো কমবেই, স্তিমিত হবে আগামী দিনে নতুন লোন পাওয়ার সম্ভাবনা। সঙ্গে উপরি হিসাবে থাকবে ব‌্যাংক বা অনুরূপ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চোখরাঙানি, এবং সম্ভাব‌্য আইনি সমস‌্যা। ভাল, মনপসন্দ শর্তে লোন এই কারণে আমরা অনেকেই পাই না, কারণ নতুন লোনের ক্ষেত্রে ব‌্যাঙ্ক অবশ‌্যই ট্র‌্যাক রেকর্ড খুঁজে দেখে। অতীত হয়ে যাওয়া ডিফল্টের ভূত বর্তমানেও তাড়া করে বেড়ায়। সেজন‌্য দরকার ক্রেডিট ডিসিপ্লিন, যা না থাকলে আগামী দিনে ব‌্যাংকিং পরিষেবার এক বড় অংশ আপনার জন‌্য অধরাই থেকে যাবে। সেজন‌্য, সাবধান- ধার করে সম্পদ গঠনের চেষ্টা একরকম, ধার করে বেহিসাবি বিনিয়োগ একেবারেই অন‌্যরকম। মেপেজুখে করুন, না হলে খাল কেটে কুমির ডাকার শামিল হবে আপনার কর্জ করার প্রবণতা।

সরকার অবশ‌্য এই বিষয়টা পুরোপুরি বোঝে। তবে সব হিসাব গুলিয়ে দিচ্ছে মূল‌্যবৃদ্ধি, যার প্রকোপ আরও বেশি বোঝা যাচ্ছে ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে।

[আরও পড়ুন: হাতে পেয়েছেন জীবনের প্রথম উপার্জন? জেনে নিন কী করবেন]

কোভিডের পর, ২০২১-’২২-এর কথা স্মরণ করুন। তারপর পৃথিবীর অনেক দেশে ইনফ্লেশন বেশ চড়া গোছের হওয়ায় সেন্ট্রাল ব‌্যাঙ্কিং নিয়মকানুন পাল্টেছে। মানিটারি পলিসির পরিবর্তনের হেতু সুদের হার বেড়েছে, এদেশেও তার ব‌্যতিক্রম হয়নি। হয়নি, তার অন‌্যতম প্রধান কারণ হল আমাদের ফসিল ফুয়েল আমদানি করতে হয়। ইমপোর্ট বিলের এক বিরাট অংশ জুড়ে থাকে ক্রুড অয়েল। শুধু গত তিন বছরের ট্রেন্ড দেখুন, পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন। তেলের দাম বাড়লে সমগ্র অর্থনীতির উপর আঘাত নেমে আসে, আর সাধারণ নাগরিকের জন‌্য ফুড, হেল্‌থ, ট্রান্সপোর্ট- এই তিন বড় খরচের হিসাবও এলোমেলো হয়ে যায়।

শুধু ফুডের কথাই ধরুন। আমাদের দেশে রিটেল ইনফ্লেশন- মানে কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্সের ভিত্তিতে যে ‘সিপিআই বাস্কেট’- সেখানে ফুডের ভূমিকা প্রায় ৪০ শতাংশ। তাই খাদ‌্যবস্তুর মূল‌্যবৃদ্ধি একান্তভাবে ‘পার ক‌্যাপিটা’ সেভিংসের উপর ঘা মারে। মনে রাখতে হবে, ফুড সেক্টর কিন্তু ক্লাইমেট চেঞ্জের বড় শিকার হতে চলেছে। অনিবার্যভাবে তা হবে, আর খাদ‌্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে আমাকে-আপনাকে- প্রত্যেককে। সরকার না-হয় নীতি বদলে, প্রয়োজনে নোট ছাপিয়ে কিছু ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করবে। সাধারণ মানুষ? এই দেশের ১৪০ কোটির বিশাল এক অংশ, তারা কী করবে?

গত বাজেটে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আমাদের ডেফিসিট কমিয়ে আনার চেষ্টায় থাকবে সরকার। সব মিলিয়ে জিডিপির ৪.৫ শতাংশ ডেফিসিট হবে আনুমানিক ২০২৫-’২৬ সালে। মার্কেট বরোয়িং, স্মল সেভিংস স্কিম ইত‌্যাদির ভিত্তিতে ডেফিসিট সংক্রান্ত পদক্ষেপ করবে কর্তৃপক্ষ। এই আর্থিক বর্ষের প্রথম কোয়ার্টারের শেষের দিকে আমরা চলে এসেছি। রিজার্ভ ব‌্যাংক আর নতুন করে রেট বাড়ায়নি, তবে দুশ্চিন্তাগুলো একদিনেই শেষ হবে না, তা তো দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।

(লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ)

[আরও পড়ুন: ফিক্সড ডিপোজিটের ষোলো আনাই খাঁটি, জেনে নিন লগ্নির সহজপাঠ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ