তিনি ঐন্দ্রিলা সাহা। কালার্স বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিকের খনা। তার সঙ্গে আড্ডায় কোয়েল মুখোপাধ্যায়।
‘খনা’ সেজে ঐন্দ্রিলার কেমন লাগছে?
– আমার সব বন্ধুরা ‘খনার বচন’ দেখে। ওদের বাবা-মাও দেখেন। আমি ভাল এবং খারাপ, দু’ধরনের প্রতিক্রিয়াই পাই। আসলে ‘খনা’র চরিত্রটা আর পাঁচটা চরিত্রর থেকে একটু আলাদা।তখনকার দিনে প্রথম নারী, যিনি জ্যোতির্বিদ্যা জানতেন। খুব স্ট্রং চরিত্র। যা বলতেন, ফলে যেত। প্রকৃতিকে বুঝতে পারতেন। আমার খুবই ইন্টারেস্টিং লাগছে।
কী কী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
– গ্রুমিং হয়েছিল। লাঠি খেলা, মার্শাল আর্টসের কিছু স্টেপ শিখেছি। পরিচালক শমীক বোস খুবই সাহায্য করেছেন।
এখনও পর্যন্ত সেরা প্রতিক্রিয়া কী পেয়েছেন?
– (হাসি) অঙ্ক আমার একেবারেই পছন্দ নয়। আর জ্যোতির্বিদ্যায় ওই অঙ্কের ব্যাপারটা আছে। খনা আবার জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী। আমার বন্ধুরা প্রায়ই বলে, তোর অদ্ভুত লাগে না? ওদের বক্তব্য, সিরিয়ালে তুই এত ভাল পড়াশোনা করিস! তার ১০ শতাংশও যদি রিয়েল লাইফে করতিস, কাজে দিত! (হাসি)
আপনি ওঁদের কিছু বলেন না?
– (হাসতে হাসতে) না। আসলে বন্ধুরা আমায় খুব সাহায্য করে। ওরা জানে আমার শুটিং, আমার ব্যস্ততা সম্পর্কে। আমার ইউনিটেও সকলে সাহায্য করে। শমীক আঙ্কল শট নেওয়া হয়ে গেলেই ছেড়ে দেয়। বলে, “যা তুই গিয়ে একটু পড়াশোনা করে আয়।”
কোন ক্লাসে পড়েন?
– ক্লাস ইলেভেনের পরীক্ষা দিলাম।
কোন স্কুল?
– মধ্যমগ্রাম গার্লস হাই স্কুল।
[আরও পড়ুন: আত্মবিশ্বাসহীন মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প নিয়ে আসছে ‘চপস্টিকস’]
শুটিংয়ে বই নিয়ে যান?
– অবশ্যই। শুটিংয়ের মাঝে পড়ি।
আচ্ছা, অভিনয়ে কীভাবে এলেন?
– আমি নাচ শিখতাম। ২০১০ সালে জি বাংলার ‘ডান্স বাংলা ডান্স জুনিয়র’-এ অডিশন দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রোমো আউট হওয়ার সাত দিন আগে জানতে পারি, আমাকে অ্যাঙ্কারিং করতে হবে। মিঠুন চক্রবর্তী আর শোয়ের ডিরেক্টর শুভঙ্কর আঙ্কল (চট্টোপাধ্যায়) সিদ্ধান্তটা নেন।
গিয়েছিলেন নাচ করতে, আর হয়ে গেলেন সঞ্চালক?
– তখন শোয়ের সঞ্চালক পাওয়া যাচ্ছিল না। আমি বলেছিলাম যে আমি নাচ করব! সঞ্চালনা করব না। তখন শুভঙ্করদা বললেন, “তুই স্পেশ্যাল এপিসোডগুলোয় নাচবি।” এমনকী, অনুষ্ঠানের গ্র্যান্ড ওপেনিংয়ে প্রথম পারফরম্যান্সও আমার হবে। তখন রাজি হয়ে গেলাম।
তার পর?
– প্রচুর অনুষ্ঠানে কাজ করেছি। ‘রান্নাঘর’, ‘দিদি নম্বর ওয়ান’, ‘রাইকিশোরী’, ‘রাশি’, ‘জানি দেখা হবে’, ‘হয়তো তোমারই জন্য’, ‘দেবীপক্ষ’, ‘আমার দুর্গা’, ‘ঝুমুর’, ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি’, ‘করুণাময়ী রানি রাসমণি’। আর এখন কালার্স বাংলায় ‘খনার বচন’।
‘খনার বচন’ ছাড়া প্রত্যেকটাতেই আপনি হয় ছোট মেয়ে, না হয় ছোট বোন। পরিবারের কোনও এক সদস্য। লিডে নয়।
– জানি। কিন্তু কখনও এটা নিয়ে ভাবিনি। অভিনয়ে যে আসব, সেটাই তো ভাবিনি! অথচ সেটা হয়ে গেল। লিড চরিত্রে কোনওদিন অভিনয়ের সুযোগ পাব, তা-ও ভাবিনি। সেটা-ও হল! আসলে আমি কোনওদিনই খুব ভেবেচিন্তে কিছু করি না। এটাও সত্যি যে এক চরিত্রে বেশি দিন অভিনয় করতে আমার ভাল লাগে না।
২০১০ সাল মানে ‘ডান্স বাংলা ডান্স জুনিয়র’—এর সিক্সথ সিজনে আপনার মতো আরও অনেক শিশু প্রতিভা উঠে এসেছিল। দীপান্বিতা, ঘন্টু, অক্ষদ। ঘরে ঘরে দারুণ জনপ্রিয়ও হয়েছিল। এদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
– সেভাবে নেই। ওরা পড়াশোনায় ব্যস্ত। আমি আমার কাজে। দীপান্বিতার সঙ্গে মাঝে দেখা হয়েছিল। এমনিতে এমজি (মিঠুন চক্রবর্তী) কলকাতায় এলে আমাকে, দীপান্বিতাকে, ঘণ্টুকে একসঙ্গে ডাকতেন। অরিত্রদাও (অরিত্র দত্ত বণিক) আসতেন। তখন দেখা হত। শেষ ২০১৩-’১৪ সালে এমজি ডেকেছিলেন। তার পর আর ডাকেননি। আমাদেরও আর দেখা হয়ে ওঠেনি।
এমজির সঙ্গে কী স্মৃতি আছে?
– তখন একসঙ্গে শো করতাম ঠিকই, কিন্তু এমজি মানে মিঠুন চক্রবর্তী যে কী, সেটা বুঝতাম না! আমি পারফরম্যান্স করলে আমাকে এমজি কখনও দশে দশ দিতেন না। ৭ বা ৮ দিতেন। শুভঙ্কর আঙ্কলের কথায় আমি একবার এমজি-কে কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলাম। এমজি বলেছিলেন, “আমি তোকে জাজ করার কে? কেউ না!” তার পর আমি ছোটবেলায় হজমোলা খেতে খুব ভালবাসতাম। তাই এমজি সেটে সবাইকে বলে রেখেছিলেন, ওকে কেউ হজমোলা দিবি না। অনেকেই জানেন না, এমজি দারুণ মুড়ি মাখতে পারেন! স্পেশ্যাল মুড়ি। শসা, টমেটো, লেবুর রস দিয়ে। যেটা আমি এখনও বানিয়ে খাই। কিন্তু আমার মুড়ি মাখাটা এমজির মতো হয় না। এমজি কী করে বানাতেন, কে জানে!
[আরও পড়ুন: ‘অন্তর্ধান’ রহস্যের আইডিয়াটা এল কোথা থেকে? জানালেন পরিচালক অরিন্দম]
বললেন, আগে নাচ শিখতেন। এখনও শেখেন বা করেন?
– এখন শিখি না। প্র্যাকটিসও নেই। এখন অভিনয়েই থাকতে চাই।
আপনার এই সিদ্ধান্তে পরিবারের কতটা সমর্থন আছে?
– বাবা-মা আমাকে সব কিছুতেই সাপোর্ট করে।
ঐন্দ্রিলার কোনও প্রিয় বন্ধু আছে?
– মা-ই আমার প্রিয় বন্ধু।
আচ্ছা, খনা তো যা বলে, ফলে। কিন্তু ঐন্দ্রিলা যা স্বপ্ন দেখেন, তা কি সত্যি হয়?
– ঐন্দ্রিলা খুব একটা স্বপ্ন দেখে না! কিন্তু যা করতে চায়, তার জন্য চেষ্টা করে। খাটে। কারণ সে জানে, চেষ্টা করলে স্বপ্ন সত্যি হয়।