সুমন করাতি, হুগলি: বাসমতী চালের (Basmati Rice) জায়গা দখল করতে চলেছে হুগলি জেলায় উৎপন্ন বিশেষ চাল চুঁচুড়ামতী। বিরিয়ানি হোক বা ফ্রায়েড রাইস – এই সব রান্নার প্রধান উপকরণ বাসমতী চাল। আর সেই চালের গন্ধ ও গন্ধেই মন ভরে ওঠে ভোজনপ্রেমীদের। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের বাজারেও এখন সুগন্ধি চালের বিশেষ চাহিদা। এই পরিস্থিতিতে বিখ্যাত বাসমতী চালের বাজারে থাবা বসাতে আসছে রাজ্যের নিজস্ব চুঁচুড়ামতী চাল।
রাজ্য ও জাতীয় স্তরে একাধিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্টেট ভ্যারাইটি রিলিজ কমিটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে চুঁচুড়া (Chinsurah) ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের নতুন ধান। এর সুগন্ধ হিমালয় সংলগ্ন রাজ্যগুলোতে উৎপাদিত বাসমতীর তুলনায় কিছুটা কম হলেও স্বাদ এবং ফলন অনেকটা বেশি। এই রাজ্যে বাসমতির ফলন যতটা হয় তার থেকে অন্তত ৩০-৪০ শতাংশ বাড়তি ফলন হবে চুঁচুড়ামতীর। ফলে দাম (Price) থাকবে মানুষের নাগালের মধ্যেই।
বাসমতী চাল মূলত ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীরে উৎপাদিত হয়। বিভিন্ন ধরনের বাসমতী ধানের গুণগত অনুযায়ী দামের তফাৎ আছে। কলকাতায় ৯০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা কেজির বাসমতী চাল পাওয়া যায়। তবে ধানের রাজ্যে চাষ করলে তেমন গন্ধ যেমন থাকে না, তেমনি ফলন অনেক কম হয়। তাই চাষিরা এই ধান চাষে বেশি উৎসাহ দেখায় না। সেই কারণে বাসমতী চালের মত রাজ্যের নিজস্ব একটি জাত তৈরির চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল ২০০৮ সাল থেকে হুগলির (Hooghly) চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্র নানা পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করে। ইতিমধ্যেই স্টেশন ট্রায়াল, মাল্টিলোকেশন ট্রায়াল, ফার্ম ট্রায়ালের ধাপ পেরিয়ে এসেছে চুঁচুড়ামতী। সর্বভারতীয় স্তরেও পরীক্ষায় পাশ করেছে হুগলি জেলার এই ধান। আর কিছুদিনের মধ্যেই রাজ্যের ভ্যারাইটি রিলিজ কমিটির কাছে ছাড়পত্রের জন্য পাঠানো হবে। আর প্রাথমিকভাবে এর নাম রাখা হয়েছে চুঁচুড়ামতী ১।
এই বিষয়ে এক কৃষি বিজ্ঞানী বলেন, ”খরিফ ও বোরো মরশুমে রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে এই ধান চাষ করা যাবে। বাসমতী এই রাজ্যে চাষ করলে প্রতি হেক্টরে প্রায় তিন টন ফলন হয়। আর এই চুঁচুড়ামতী খরিফে সাড়ে চার টন ও বোরো ৫.৮৯ টন ফলন দিচ্ছে। কিছু জায়গায় উৎপাদন আরো বেশি। আর পশ্চিমবঙ্গে চাষ হওয়া বাসমতীর তুলনায় চুঁচুড়ামতীর গন্ধ অনেকটা বেশি হবে।”
ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের এক কৃষি অধিকর্তা বলেন, ”আমাদের গবেষকরা বাসমতী জাতের নতুন ধান চুঁচুড়ামতী ১ উদ্ভাবন করেছেন। এর ছাড়পত্রের জন্য রাজ্য ভ্যারাইটিজ কমিটির কাছে যাবতীয় তথ্য পাঠাব। তা পাওয়ার পর নিয়ম মেনে চাষিদের জন্য বীজ তৈরি হবে। এই বীজ হাতে পেতে আরও অন্তত তিন বছর সময় লাগবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.