Advertisement
Advertisement
polygamic

একাধিক নারী বা পুরুষে আকৃষ্ট! হরমোন দোষেই কি চরিত্রহীন?

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

People likely to be polygamic due to hormone imbalance? | Sangbad Pratidin

কেন একাধিক নারী বা পুরুষের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হন মানুষ? (ফাইল ছবি)

Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:December 20, 2023 7:47 pm
  • Updated:December 20, 2023 7:47 pm

কোয়েল মুখোপাধ্যায়: কেউ কেউ একাধিক নারী বা পুরুষের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হন। একজনে সন্তুষ্ট নন। এঁদের কম কুকথাও শুনতে হয় না। দাগিয়ে দেওয়া হয় চরিত্রকে। কিন্তু কেন এমন হন একজন? এটা কি শরীরের অসুখ, না কি মনের খেলা? জানতে পড়ুন কী বললেন ফর্টিস হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. সত‌্যম চক্রবর্তী।

একে মন মজে না। আকর্ষণ মোচড় দেয় বার বার। উচিত-অনুচিতের অঙ্ক কে-ই বা কষে আর! পোশাক বদলানোর মতো আপনার জীবনে আসে প্রেম। কীসের মনোগ‌্যামি! আপনি হলেন যাকে বলে, একেবারে মনে-প্রাণে পলিগ‌্যামাস। কিন্তু এমন কেন? আর পাঁচজনের থেকে আপনার অনুভূতি আলাদা কোথায়? রূপের ঠাঁটবাট না গুণের জোয়ার, কে চালিত করে আপনার ‘পলিগ‌্যামি’ প্রবৃত্তি? সত্যিই কি সুন্দরী মহিলারা প্রেমে বেশি বেশি করে পড়েন? একের বেশি ‘পার্টনার’-এ আসক্ত হন? গোটাটাই কি হরমোনের খেলা? ইস্ট্রোজেন, ইস্ট্রাডিয়ল কিংবা টেস্টোস্টেরনের কারিকুরি? সাধারণের তুলনায় ওঁদের এই হরমোনগুলির ক্ষরণ বেশি হয়, তাই? আসল সত্যিটা কী? উত্তর না। একাধিক পুরুষ কিংবা নারীতে আকৃষ্ট হওয়ার নেপথ্যে হরমোনের কম-বেশিটা কোনও ‘ফ‌্যাক্টর’ই নয়। পুরোটাই মানসিক।

Advertisement

ইস্ট্রোজেন দায়ী নয়
মনোগোমাস হোক বা পলিগোমাস, ‘ফিমেল সেক্সুয়াল ডিজায়ার’ তথা মেয়েদের যৌন আকাঙ্ক্ষায় হরমোনের ভূমিকা ঠিক কী? সেটা আগে বুঝতে হবে। ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরনের হার স্বাভাবিক আছে মানে তাদের ‘সেক্সুয়াল ডিজায়ার’ও স্বাভাবিক আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু মহিলাদের ইস্ট্রোজেনের হার স্বাভাবিক আছে মানেই যে তাঁদের ‘সেক্সুয়াল ডিজায়ার’ স্বাভাবিক থাকবে, এটা কোথাও লেখা নেই। বরং বদলে ইস্ট্রোজেনের কোনও ভূমিকাই নেই যৌন আকাঙ্ক্ষা উদ্রেক করার ভূমিকায়। একটা বাচ্চা মেয়ের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেনের ভূমিকা হল ‘ডেভলপমেন্ট অফ আ ফিমেল সাইকি’ এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন গঠন-সহ নারীত্বের বহিঃপ্রকাশ। বয়োঃসন্ধিকালে ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ একটি মেয়েকে শেখায় প্রেমিকা হতে। আবার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময় এই হরমোনের ক্ষরণ মেয়েদের হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায‌্য করে। আরও একটু বয়স বাড়লে, এটি মেয়েদের মধ্যে মাতৃত্বের ভাবনা তৈরি করে। কিন্তু ইস্ট্রোজেন কখনও তার মধ্যে একের বেশি সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন‌্য আকর্ষণের জন্ম দেয় না। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে এই কথা প্রযোজ‌্য। কাজেই এই ধারণা সমর্থনযোগ‌্য নয়। একটা হরমোনের প্রসঙ্গ টেনে কখনও বলা যায় না, কোনও মহিলা ‘পলিগ‌্যামি’তে জড়াবেন বা তাঁর জীবনে অনেক পুরুষ আসবেন। আর এ রকম কোনও বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা বা গবেষণাজনিত প্রমাণও নেই। কোনও ‘হিউম‌্যান স্টাডিজ’ হয়নি, হওয়ার জায়গাও নেই বললেই চলে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: হাঁটুর জয়েন্ট ফুলে আছে? সাবধান! জল জমে বাড়তে পারে সমস্যা, কী করবেন?]

প্রভাবটা আগাগোড়া ‘সাইকিক’
অনেক সময় মহিলাদের পিট্যুইটারি টিউমার ধরা পড়ে। ফলে গোটা পিট্যুইটারি গ্ল‌্যান্ড-টাই কাটা পড়ে। তখন তাঁদের ‘সেক্সুয়াল ডিজায়ার’ কমে যায়। তার মানে যদি সেই মহিলাদের তখন ইস্ট্রোজেন দেওয়া হয়, তাহলেই তাঁদের যৌন আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠবে? উত্তর, না। পিট্যুইটারি টিউমার সার্জারির পর ইস্ট্রোজেন মহিলাদের দেওয়া হয় তাণদের হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখার জন‌্য। তাঁদের ‘ফিমেল লিবিডো’ বা যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করার জন‌্য নয়। পুরুষদের ‘সেক্সুয়াল ডিজায়ার’ যেমন টেস্টোস্টেরন দিয়ে পরখ হয়, মহিলাদের ক্ষেত্রে তা কিছুটা টেস্টোস্টেরন দিয়ে হয়। তার সঙ্গে দেওয়া হয় DHEA প্রিপারেশন। Dehydroepiandrosterone। এটি অ‌্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। যে মহিলাদের হাইপো-অ‌্যাক্টিভ ‘সেক্সুয়াল ডিজায়ার’ আছে, তাঁদের পিট্যুইটারি গ্রন্থির অস্ত্রোপচারের পর এই প্রিপারেশন দেওয়া হয়। আসলে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার যদি ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি হয়, তাঁর যৌন আকাঙ্ক্ষা সেই কারণে কমে না। কমবে তাঁর ভ‌্যাজাইনাল ড্রাইনেসের জন‌্য, Dyspareunia-র (সঙ্গমকালে ব‌্যথা)র জন‌্য। সেই মহিলার যৌন আকাঙ্ক্ষার বাড়া-কমা এই DHEA প্রিপারেশন, টেস্টোস্টেরন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে গোটাটাই আদপে মানসিকতার ব‌্যাপার। মনে রাখতে হবে, ‘ফিমেল লিবিডো’য় হরমোনের রোল ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। কিন্তু একইসঙ্গে ‘সাইকিক ইনফ্লুয়েন্স’ অর্থাৎ মাথার ভূমিকা অনেক বেশি। ৬০-৭০ শতাংশ।

মানুষ এমনিই ‘পলিগ‌্যামাস’

ভুললে চলবে না, মানুষ (পুরুষ/মহিলা নির্বিশেষে) এমনিতেই পলিগ‌্যামিক। পলিগ‌্যামি তথা বহুমাত্রিক সম্পর্ক একটি প্রাকৃতিক সত্তা। যে জাতি পলিগ‌্যামাস নয়, পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্বই থাকবে না। যেমন ঘুঘুপাখির একটি প্রজাতি। এরা ‘মনোগ‌্যামাস’। সারাজীবন একটি সঙ্গীর সঙ্গেই থাকে। তবে মানুষ ‘পলিগ‌্যামাস’ হতে পারে না কারণ সামাজিক চাপ। সমাজ কী বলবে, সেই ভয় কাজ করে তাঁর মনে। এই ভয় বা সংরক্ষণশীল মনোভাব যাঁদের মধ্যে আছে, তাঁরাই ‘মনোগ‌্যামি’তে আবদ্ধ। আর এঁদের সংখ‌্যাই বেশি। তুলনায় অনেক স্বাধীন ভাবনাচিন্তার মানুষ যাঁরা, যাঁরা সমাজের এই সংকীর্ণতায় বিশ্বাস রাখেন না, তাঁরা বহু সম্পর্কে নির্দ্বিধায় জড়ান। তাঁরা যথার্থ অর্থেই ব‌্যতিক্রমী। আবার উপজাতিদের মধ্যেও ‘পলিগ‌্যামাস’ প্রবৃত্তি দেখা যায়। কিন্তু আমাদের সমাজে ‘পলিগ‌্যামাস’রা সংখ‌্যায় নগণ‌্য।

[আরও পড়ুন: সাতচল্লিশে হৃদরোগে আক্রান্ত শ্রেয়স, কম বয়সে কেন বাড়ছে ঝুঁকি?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ