Advertisement
Advertisement
Probashe Durga Puja

Probashe Durga Puja: রাজার হাত ধরে ৫৫০ বছর আগে দুর্গাপুজোর সূচনা, আজও রাজশাহীতে দেবী আরাধনা

তৎকালীন সময়ে রাজা কংসনারায়ণ ৮ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন।

Probashe Durga Puja: 550 years old Durga Puja in Rajshahi still celebrated in Bangladesh | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:October 13, 2023 8:48 pm
  • Updated:October 13, 2023 8:48 pm

সুকুমার সরকার, ঢাকা: দুর্গোৎসবের আনন্দ, উদযাপন এপার বাংলার মতো ওপারেও কিছু কম নয়। রাজা কংসনারায়ণের দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023), যা শুরু হয়েছিল সাড়ে ৫০০ বছর আগে। মুঘল শাসক থেকে তিনি রাজা উপাধি প্রাপ্তি উপলক্ষে বিরাট দুর্গোৎসবের সূচনা করেন তা আজও ইতিহাসের পাতায় চিরভাস্বর হয়ে আছে। অবিভিক্ত বরেন্দ্র উত্তরাঞ্চলের শহর রাজশাহীর (Rajshahi) তাহেরপুরের সামন্তরাজা ছিলেন এই কংসনারায়ণ। পাঠান আমলে ফৌজদার হিসেবেও নিযুক্ত হয়েছিলেন। রাজশাহী থেকে চট্টগ্রামের (Chattogram) বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মগ জলদস্যুদের দমনে ইনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। কংসনারায়ণ ছিলেন একজন প্রজা হিতৈষী রাজা। শেষ জীবনে তিনি তাহেরপুরে ফিরে এসে নানা প্রজাকল্যাণমূলক ও ধর্মীয় কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

এই বিখ্যাত পুজোর আয়োজক রাজা কংসনারায়ণের বর্তমান বংশধরেরা বাস করেন পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহরে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর দেবীবিগ্রহ-সহ তাঁরা জলপাইগুড়ি চলে যান। তাহেরপুরের পাণ্ডাপাড়ার চক্রবর্তী পরিবারে আজও পুজো পেয়ে চলেছেন অষ্টধাতুর দুর্গাপ্রতিমা। সঙ্গে রয়েছেন কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী। সেই বিরাট উৎসবের জৌলুস না থাকলেও, নিষ্ঠা সহকারে বাড়ির অন্দরমহলেই পুজো আজও হয়ে আসছে। যে মণ্ডপ নিয়ে কথা, তার নাম শ্রীশ্রী গোবিন্দ ও দুর্গামাতা মন্দির। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে এই মন্দির। এটি এখন বাগমারার একটি পৌর এলাকা। রাজশাহী জেলা সদর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরের এই তাহেরপুরের আদিনাম ছিল ‘তাহিরপুর’। আজ থেকে ৫৪০ বছর আগে এখান থেকেই সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসবের শুরু বলে ধারণা করা হয়। সে আমলে রাজা কংস নারায়ণ রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা খরচ করে রাজবাড়িতে পুজোর আয়োজন করেছিলেন। এখনকার আমলে ওই টাকার পরিমাণ ৩০০ কোটিরও বেশি। 

Advertisement

এর আগে মহাশক্তির আরাধনা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু এত টাকা ব্যয় করে কোনও রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রথম আয়োজনটা সম্ভবত করেছিলেন রাজা কংসনারায়ণ। তাঁর সৌজন্যে মানুষ দেখেছিল অকালবোধনে আধুনিক দুর্গাপুজো। তাহেরপুরের রাজবংশ ছিল বাংলার প্রাচীন রাজবংশগুলির অন্যতম। 

Advertisement

[আরও পড়ুন: কাশ্মীরকে ভারতের থেকে বিচ্ছিন্ন করার ডাক! ৭ বছরের জেল হতে পারে অরুন্ধতী রায়ের]

কংসনারায়ণ এমন কিছু করতে চাইলেন, যার জন্য হিন্দু সমাজ তাঁকে আজীবন মনে রাখবে। রাজা পণ্ডিতদের ডাকলেন রাজসভায়। জানালেন, তিনি আয়োজন করতে চান অশ্বমেধ যজ্ঞ। পণ্ডিতেরা রাজার এ ইচ্ছে নাকচ করে দিলেন প্রথমেই। তাঁরা বললেন, কলিযুগে অশ্বমেধ যজ্ঞের বিধান শাস্ত্রে নেই। এ কথা শুনে রাজার তো মন খারাপ। ঠিক তখনই পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রী দিলেন দুর্গাপুজোর পরামর্শ। কারণ, দেবী দুর্গতিনাশিনীর পুজো নিজেই এক মহাযজ্ঞ। তিনি আদেশ করলেন, এই শরতেই যেন আয়োজন হয় এ উৎসবের। কথামতো কাজ। মহাসমারোহে হলো দুর্গোৎসব।

ষোলো শতকের সে উৎসবে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ, মতান্তরে ৯ লক্ষ টাকা। বিরাট ওই উৎসব হয়েছিল রামরামা গ্রামের দুর্গামন্দিরে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে দেখে গেল এই উৎসব। ১৮৬২ সালে পরবর্তী রাজা বীরেশ্বর রায়ের স্ত্রী জয়সুন্দরী দেবী নির্মাণ করেন দুর্গামন্দির। এটি এখনও আছে আগের মতো। মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক চিরঞ্জীব রায়। এরপর তাঁরা শুধু বছরে একবার পুজোর সময় আসতেন। ১৯২৭ সালে তাঁরা শেষবারের মতো তাহিরপুরে এসেছিলেন।

[আরও পড়ুন: ‘তোমার জীবন থেকে চলে গেলাম’, স্ত্রীকে ভিডিও কল করে আত্মঘাতী যুবক]

মন্দিরের ভেতরে ঢুকলে প্রথমেই ডান হাতে পড়বে শিবমন্দির। তারপর গোবিন্দ মন্দির, এর পর দুর্গামন্দির (Durga Temple)। চিরঞ্জীবের ধারণা, দুর্গামন্দিরের চেয়েও পুরনো শিবমন্দির ও গোবিন্দ মন্দির। এসবই এক ঐতিহ্যের স্মারক। চিরঞ্জীব রায় বলেন, ‘‘ইতিহাস কখনও মুছে যাওয়ার নয়। এখান থেকেই দুর্গাপুজো সর্বজনীন রূপ নিয়েছে। তাই এটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। তার আগে মন্দিরের চারপাশে যে রাজবংশের সম্পত্তি বেহাত হয়ে গিয়েছে, তা উদ্ধার করা দরকার। কারণ, এগুলো তো মন্দিরেরই অংশ। সেগুলো ছাড়া মন্দিরটির অঙ্গহানি হয়ে আছে।’’ মন্দিরটিতে এখন আর মাটির প্রতিমায় দুর্গাপুজো হয় না। প্রতিমা বিসর্জনও করা হয় না। ২০১৮ সালে স্থানীয় সাংসদ এনামুল হক প্রায় ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অষ্টধাতুর প্রতিমা বানিয়ে দিয়েছেন। এই মন্দিরের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে হিন্দু (Hindu) সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের উৎপত্তির ইতিহাস। যে ইতিহাস আর কখনো পুরনো হওয়ার নয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ