বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: সবে হাইভোল্টেজ ভোটের প্রচার শুরু হয়েছে৷ প্রথম দফার ভোটাভুটিও হয়নি৷ তার আগেই প্রচার সভা থেকে এক্কেবারে নির্বাচনী ফলাফল জানিয়ে দিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল৷ বীরভূম এবং নদিয়ায় তৃণমূল জিতে গিয়েছে বলেই জানান তিনি৷
[ আরও পড়ুন: স্লোগান নয়, অভিষেকের প্রচার মিছিলে সুর তুলছে লোকগান]
আগাগোড়াই স্পষ্ট কথা বলতে ভালবাসেন অনুব্রত মণ্ডল৷ কখনও পাঁচন আবার কখনও নকুলদানার দাওয়াই দিয়ে বিতর্কেও জড়িয়েছেন তিনি৷ কথাই যেন সবচেয়ে বড় ইউএসপি তাঁর৷ তাই এহেন নেতা পর্যবেক্ষক হিসাবে শনিবার নদিয়ায় নির্বাচনী প্রচার সভায় যোগ দেন৷ সেই সভা মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘‘জিতে গিয়েছি৷ বীরভূমের দু’টি আসনেই জিতে গিয়েছি৷ শুধু কত লক্ষ ভোটে জিতব, সেটাই বড় ব্যাপার৷ নদিয়াতেও জিতে গিয়েছি৷ এখন শুধু ভোটের হার বাড়ানোটাই বাকি৷’’
[ আরও পড়ুন: মায়ের জন্মদিনে বাড়ি থেকে দূরে, মন্দিরে গিয়ে আবেগে ভাসলেন মুনমুন]
বীরভূমের পুলিশ সুপার-সহ চারজন পুলিশ আধিকারিককে বদলি করে দেওয়া হয়েছে সদ্যই৷ এই সিদ্ধান্তে বিরোধিতা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এ প্রসঙ্গে একইরকমভাবে ক্ষুব্ধ দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতাও৷ তিনি বলেন, ‘‘কী হবে? মনে নেই, বিধানসভা নির্বাচনের আগে বীরভূমের পুলিশ সুপারকে সরিয়ে দিয়েছিল৷ পুরস্কারটা কে এনে দিল? নির্বাচন কমিশনের পুরস্কারটা বীরভূমের জেলাশাসক এনেছিলেন৷ আবারও বলে দিলাম, নদিয়া, বীরভূম দুই জেলাতেই পুরস্কার জেলাশাসক নিয়ে আসবে৷ পুলিশ সুপার থাকল কী থাকল না, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না৷ নির্বাচন কমিশন যা ভাল মনে করেছে, তাই করেছে৷’’
[ আরও পড়ুন: হ্যাটট্রিক চাই, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের জন্য যজ্ঞ শ্রীরামপুরের কর্মী-সমর্থকদের]
নদিয়ার রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের গাংনাপুরের জনসভার মঞ্চ থেকে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধেও সুর চড়ান তিনি৷ তীব্র সমালোচনার সুরে অনুব্রত মণ্ডল বলেন,‘‘মোদি শুধু নিজেকে ভালবাসেন৷ আর কাউকে ভালবাসেন না৷ ভারতবর্ষে অন্ধকার নামিয়ে এনেছে৷ বেকার ছেলেদের কোন চাকরি দেয়নি৷ জিএসটি চালু করায় ছোট ব্যবসাদারদের মাথায় হাত পড়েছে৷ ২০১৪ সালে চাওয়ালা থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি এখন পুঁজিবাদীদের চৌকিদার বনে গেছেন৷’’
[ আরও পড়ুন: যশোর রোড অবরুদ্ধ করে শান্তনুর মিছিল, কমিশনে অভিযোগ তৃণমূলের]
মোদির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে অনুব্রত মণ্ডল বলেন,‘‘তুমি কার চৌকিদার? ভারতের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ, মা-বোন কিংবা নেতার ছেলেদের কারোরই চৌকিদারের প্রয়োজন নেই৷ তুমি আসলে নীরব মোদির মত প্রতারকদের চৌকিদার৷ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তোমার সব কিছুই পালটে গিয়েছে৷ দিনে তিনটে করে পাঞ্জাবি বদল করো৷ সাধারণ মানুষের কথা তুমি বিন্দুমাত্র ভাবো না৷ অসমে গিয়ে তুমি মানুষকে অসম ছেড়ে দিতে বলছো? তোমার কাছে আমার প্রশ্ন, অসম কি তোমার দাদুর ফ্যাক্টরি না জমিদারি, যে তুমি ছেড়ে দিতে বলছো?’’ পুলওয়ামার জঙ্গি হামলায় শহিদ সেনাদের নিয়ে মোদি রাজনীতি করছেন বলেও সুর চড়ান অনুব্রত৷ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় বিরোধী দলকে আক্রমণে এবং জয়ের বিষয়ে আত্মপ্রত্যয় ভোটের আবহে কর্মীদের কাছে অক্সিজেনের মতো কাজ করেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷ তবে বীরভূম জেলা সভাপতির এই মন্তব্যকে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলে ফের কমিশনের দ্বারস্থ হতে পারেন বিরোধীরা৷
ছবি: সুজিত মণ্ডল