Advertisement
Advertisement

Breaking News

Russia-Ukraine war

Russia-Ukraine Conflict: ‘সর পে লাল টোপি রুশি’ এবার গাওয়া শক্ত

রাশিয়া নয়, ভারতের প্রধান ও বড় শত্রু হল চিন।

Here is how India reacts to Russia-Ukraine war। Sangbad Pratidin

প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে

Published by: Biswadip Dey
  • Posted:February 26, 2022 5:25 pm
  • Updated:February 26, 2022 10:07 pm

রাশিয়া নয়, এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান ও বড় শত্রু চিন। শত চেষ্টাতেও চিনের আগ্রাসী মনোভাবে কোনও বদল চোখে পড়ছে না। চিন আর রাশিয়ার সুসম্পর্কের প্রেক্ষিতে ভারতের রাশিয়াকে শত্রু করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ, এখনও প্রতিরক্ষা খাতে রাশিয়ার উপর ভারতের নির্ভরশীলতা দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি।

জয়ন্ত ঘোষাল: আগরতলা থেকে একজন বিশিষ্ট লেখিকা আমাকে প্রশ্ন করেছেন, আমরা কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি? হিটলারের জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করেছিল। হিটলারের ফাঁদে পা দিতে হয়েছিল বিশ্বকে। পোল্যান্ড আক্রমণ কেন্দ্র করে সেদিন বিশ্ব দু’ভাগে ভাগ হয়েছিল। এবার, ইউক্রেন (Ukraine crisis) আক্রমণ করলেন ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin)। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়।

Advertisement

তবু প্রশ্নটা শুনে কারগিল যুদ্ধের সময়ের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। তখন পাক অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে লালকৃষ্ণ আডবানি ও জর্জ ফার্নান্ডেজ ‘হট পারস্যুট’-এর প্রস্তাব দেন। ক্যাবিনেট বৈঠকে ব্রজেশ মিশ্র ও যশবন্ত সিংয়ের বিরোধিতা করেন। আডবানি বৈঠকে বলেছিলেন, ইটের বদলে পাটকেল ছুঁড়তেই হবে। তা না হলে পাকিস্তানকে শায়েস্তা করা যাবে না। খবরের কাগজে সেই গরম-গরম যুদ্ধ পরিস্থিতি কভার করেছি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: শেয়ার আনার আগে চমক! LIC-তে ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে ছাড়পত্র মন্ত্রিসভার ]

কিন্তু সেই সময়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রজেশ মিশ্র একদিন আমাকে ডেকে বলেছিলেন, তুমি লিখছ, আডবানি ‘লিমিটেড’ ওয়ার চাইছেন। কিন্তু যুদ্ধ কি সীমিত থাকে? যুদ্ধ একবার শুরু হয়ে গেলে তখন কি আর তা রাষ্ট্রনায়কদের নিয়ন্ত্রণে থাকে? “ইভেন্ট হ্যাজ ইট’স মোমেন্টাম।” বিলিয়ার্ডের বলগুলোর মতো একজন আরেকজনকে ধাক্কা দিতে দিতে এগোয়। ব্রিঙ্কম্যানশিপের পেশি প্রদর্শনের স্নায়ুর যুদ্ধে বিপদ হল– শুরু হলে শেষ কীভাবে হবে, তার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

রুশ সৈন্যরা এখন পূর্ব ইউক্রেনের দু’টি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে প্রবেশ করেছে, পৃথিবীর আশঙ্কা, এক ভয়ানক যুদ্ধ হল বলে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট অনেক দিন ধরেই স্বদেশীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে এহেন প্রমাদ গুনছিলেন। ২০১৩-র নভেম্বর মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সংযুক্তির চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন সেদেশের তৎকালীন রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিক। এরপর বিক্ষোভে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারিত হয়ে দেশ ছেড়ে পালান। ক্ষুব্ধ রাশিয়া ২০১৪-র মার্চ মাসে ইউক্রেনের অন্তর্গত দক্ষিণ ক্রিমিয়ার উপদ্বীপ দখল করে নেয়। এই দখল ইউক্রেনে জাতিগত সমস্যা বাড়ায়। রুশ বিদ্রোহী কার্যকলাপ বাড়তে থাকে। ইউক্রেনের মানুষ নানা সাইবার হামলার শিকার হয়।

[আরও পড়ুন:Russia-Ukraine Conflict: ‘আশ্রয় নয়, অস্ত্র চাই’, বাইডেনকে সপাট জবাব ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ]

রাশিয়ার সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় আমেরিকা ইউক্রেনের উপর ‘ন্যাটো’র প্রভাব বিস্তার শুরু করে। আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইউক্রেনকে অ্যান্টি-ট্যাঙ্কের মতো প্রাণঘাতী অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয়। ২০২২-এ এসে দেখছি ইউক্রেনকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার যুদ্ধ-পরিস্থিতি।

আমরা ছাপোষা সাধারণ মানুষ, যুদ্ধ চাই না। তবে যুদ্ধের খবর পড়তে ভালবাসি। যুদ্ধ হলে চ্যানেলের টিআরপি বাড়ে। এ-ও এক ধরনের ভয়্যারিজমের অচেতন মনস্তত্ত্ব। ‘গুপী গাইন ও বাঘা বাইন’-এর হাল্লা রাজার কথা মনে পড়ে। অথবা চার্লি চ্যাপলিনের ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’। আর আমরা এখনও সেই ‘গণদেবতা’-র চণ্ডীমণ্ডপের গ্রামীণ আমজনতা।

তার মানে আমরা সাধারণ মানুষ, যারা আর কে লক্ষ্মণের ‘দ্য কমন ম্যান’; আমরা যুদ্ধের ছবি, হিংসার দৃশ্য– এসব ইউটিউব বা নেটফ্লিক্সে দেখতে ভালবাসি, কিন্তু আসলে কি যুদ্ধ চাই? ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রভুরা আরও অস্ত্র বিক্রি করবেন। রুশ প্রভুও, প্রাক্তন কেজিবি বস, এই যুদ্ধে অনেক অস্ত্র ব্যবহার করবেন। অস্ত্র ব্যবহার না হলে মরচে ধরে যাবে তো! কালীপুজোয় বাজি না ফাটালে যতই রোদ্দুরে রাখুন, পরের বছর পর্যন্ত কি রাখা যায়?

রাশিয়ার অর্থনীতির অবস্থাও শোচনীয়। এই যুদ্ধ নামক উগ্র জাতীয়তাবাদ পুতিনকে নির্বাচনী রাজনীতিতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু অর্থনীতির মানদণ্ডে আমেরিকা অনেক এগিয়ে। শুধু টেক্সাস প্রদেশের আর্থিক বৃদ্ধি বা জিডিপি রাশিয়ার চেয়ে অনেক উপরে। কিন্তু পুতিনের সমরবাদের কৌশল মারাত্মক। বিশেষত, চিনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সখ্য আগামী দিনের বিশ্ব রাজনীতিকে কোন পথে নিয়ে যাবে– তা ভারতেরও উদ্বেগের কারণ। কোনও সন্দেহ নেই, এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারত বড় কূটনৈতিক সংকটে। যাকে বলে, ‘ন যযৌ ন তস্থৌ’ পরিস্থিতি।

আমেরিকা কান ধরে বলতে চাইছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে এখনই জেহাদ ঘোষণা করো। যেমনটা ফ্রান্স বা জার্মানি করছে। ইউক্রেনের পাশে এসে দাঁড়াও, যেমনটা ন্যাটো-র সদস্যরা করছে। আবার পুতিন বলছেন, হে ভারত, ভুলিও না, তোমার সঙ্গে কি আমার আজকের সম্পর্ক? সেই নেহরু যুগ। ভিলাই আর ভাইজ্যাগ ইস্পাতনগরী রাশিয়ার শহর নির্মাণ, যা ছিল নেহরুর মন্দির। হে ভারত ভুলিও না, রাজ কাপুর নাচছেন, ‘সর পে লাল টোপি রুশি/ ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্থানি’। ‘মেরা নাম জোকার’-এর সেই রুশ ব্যালে নর্তকী, আমার তো আরও পুরনো সাদা-কালো রুশি ছবি মনে পড়ে, যেখানে দক্ষিণ ভারতের সমুদ্র বন্দর শহরে এক রুশ ব্যবসা করতে এসে ভারতীয় মেয়ের প্রেমে পড়ছে, তাদের বিয়ে হচ্ছে কি না, তা জানার জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম।

সেসব রোমান্টিসিজমের কথা থাক। এখনকার দিনে দাঁড়িয়েও রাশিয়াকে আমরা ছাড়ি কী করে? এখনও প্রতিরক্ষা খাতে রাশিয়ার উপর ভারতের নির্ভরশীলতা দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। রাশিয়ার কাছ থেকে বেশ কিছু যুদ্ধাস্ত্র ডেলিভারির অপেক্ষায়। রাশিয়ার সঙ্গে সমরচুক্তি বাতিল হলে আঙ্কেল স্যাম আর ইজরায়েল হয়তো আমাদের খদ্দের হিসাবে পাবে আরও বেশি করে, কিন্তু ভারতের তো উচিত সব বাজার থেকেই জিনিস কেনা। শুধু একজনের কাছ থেকে না নিয়ে যেমন আমরা ঘুরে ঘুরে সবজি বাজার করি।

আর সবচেয়ে বড় কথা হল কী জানেন? এই মুহূর্তে রাশিয়া নয়, আমাদের প্রধান ও বড় শত্রু হল চিন। শত চেষ্টাতেও চিনের আগ্রাসী মনোভাবে কোনও বদল চোখে পড়ছে না। চিন আর রাশিয়ার সুসম্পর্কের প্রেক্ষিতে ভারতের কি এখন রাশিয়াকে শত্রু করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে? আফগানিস্তানে নতুন তালিবান সরকার গঠনের পরেও ভারত যে সরাসরি তালিবান শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে– তাতেও আছে মস্কোর সক্রিয় সহযোগিতা।

আবার, বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর যে ফ্রান্স ও জার্মানিতে গিয়ে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ইউরোপের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখছেন, আমি মনে করি, তা একদম যথোচিত পদক্ষেপ। ইমরান খান চিন, তারপর রাশিয়া সফরে গেলেন, রাশিয়া টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে রাশিয়াকে সমর্থন করছেন, আর আমরা পুতিনবাবুর বিরোধিতা করব?

দোহাই, ভারতের বিদেশনীতিকে বিজেপি-তৃণমূল, সিপিএম-কংগ্রেস প্রিজমে দেখবেন না। এটা বিজেপির বিদেশনীতি নয়, ভারতের বিদেশনীতি। প্রণব মুখোপাধ্যায় একবার রসিকতা করে আমাকে বলেছিলেন, ‘আমেরিকার কালো হাত ভেঙে দাও/ গুঁড়িয়ে দাও’ সিপিএম বলতেই পারে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হলে সীতারাম ইয়েচুরিকেও আমেরিকার সঙ্গে বৈঠকে বসতে হবে।

আমি আমআদমি। এই করোনা পরিস্থিতিতে যুদ্ধ চাই না। চাই না বাড়ুক তেলের দাম। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন, ‘সৎ ও আন্তরিক’ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশ ও ন্যাটো-র মধ্যে মতপার্থক্য নিরসনের জন্য। আরও অনেকের মতো আমিও চাই বাইডেন-পুতিনও শীঘ্র বৈঠকে বসুন। রাষ্ট্রসংঘ আরও সক্রিয় হোক। আদার ব্যাপারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আমার লাভের চেয়ে লোকসান বেশি!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ