কিশোর ঘোষ: ছেলেদের পৃথিবী, মেয়েদের পৃথিবী। এভাবেই জগৎকে দেখতে বলেছিল পুরুষতন্ত্র। ওঁরা অস্বীকার করলেন। পাহাড়ের চেয়েও উঁচু, কাঁচের চেয়েও ধারাল বাঁধা ডিঙিয়ে কেউ হলেন ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, কেউ বা ভারতের প্রথম বাণিজ্যিক বিমানের পাইলট দুর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেউ মাতঙ্গিনী হাজরা, সুফিয়া কামাল, সরোজিনী নাইডু, সুচেতা কৃপালিনী, বাচেন্দ্রী পাল, ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ। যুগ বদলে আর্ধেক আকাশের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। ফলে আজকে ভারতের রাষ্ট্রপতির নাম দ্রৌপদী মুর্মু, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্রীড়াক্ষেত্রেও অসংখ্য উজ্জ্বল তারা- সানিয়া মির্জা, সাক্ষী মালিক, সাইনা নেওহাল, মেরি কম, পিভি সিন্ধু, হরমনপ্রিত কৌর… বলে শেষ করা যাবে না। এদেশের পৃথিবীখ্যাত ইতিহাসবীদের নাম রোমিলা থাপার। সবচেয়ে বড় অ্যাকামিডিশিয়ান গায়েত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। অমাবস্যার কালো অন্ধকার থেকে এই আলোর যাত্রার নেপথ্যে রয়েছে নারী আন্দোলন, যা নারী দিবসের শিকড়।
‘সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র’ থেকে একজন দ্রৌপদী মুর্মু কিংবা একজন রোমিলা থাপার হয়ে ওঠার লড়াইকেই আসলে স্বীকৃতি দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। তাই ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সমাজে মেয়েদের গুরুত্ব ও অবদানের কথা মনে করিয়ে দিতেই এই বিশেষ দিনটিকে পালন করা হয়। কিন্তু ৮ মার্চই কেন? কীভাবে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন?
সে এক শতাব্দীরও বেশি পুরনো ইতিহাস। ১৮৫৭ সাল। মজুরিবৈষম্য, কাজের সময়, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় নামেন সুতো কারখানার মহিলা শ্রমিকেরা। মিছিল শান্তিপূর্ণ হলেও সহ্য হয়নি সমাজনিয়ন্ত্রক পুরুষদের। মেয়েরা এভাবে সরব হবেন ভাবতেই পারেননি তাঁরা। ফলে লেঠেন বাহিনী হামলা চালায় ওই মিছিলে। পরের ইতিহাস লেখেন জার্মান রাজনীতিবিদ তথা জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের অন্যতম ডাকসাইটে নেত্রী ক্লারা জেটকিন। তাঁর নেতৃত্বেই নিউইয়র্কে ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন আয়োজিত হয়। ১৯১০-এ অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে।
কোপেনহেগেনের মতো বড় নারী সম্মেলন আগে দেখেনি দুনিয়া। ১৭টি দেশের ১০০ জন মহিলা প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। এখানেই প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন ক্লারা। সিদ্ধান্ত হয় আগামী বছর থেকে নারীর সম-অধিকারের দাবিতে এই দিনটি পালিত হবে। ১৯১৩ সাল থেকেই ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু করে বেশ কয়েকটি দেশ। রাষ্ট্রসংঘের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আসে ১৯৭৫ সালে। তখন থেকেই প্রতি বছর একটি বিশেষ থিম বা ভাবনা নিয়ে পালন করা হয় এই দিনটিকে। এখনও যে ঘরের একাংশ অন্ধকার, বহু জানলা খোলা বাকি!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.