অর্ণব আইচ: আপনি অফিস বা বাড়িতে। আপনার গাড়ি পার্কিংয়ে। ডিজিটাল লক করা। ভাবছেন, চোরের পক্ষে দরজা খোলা সহজ নয়। ভুল ভাবছেন। নিশ্চিন্ত থাকার অবকাশ নেই। প্রায় দু’শো মিটার দূর থেকেই ৬ হাজার টাকার ডিভাইস ব্যবহার করে অনায়াসে চুরি হতে পারে বিলাসবহুল মূল্যবান গাড়ি। আর এই যন্ত্র কিনতে পাওয়া যাচ্ছে কলকাতায়।
কোনও ‘হাই টেক গাড়ি চোর’অনায়াসে ইউ টিউব দেখে ওই ডিভাইসের সাহায্যে তরঙ্গ ‘চুরি করে’ হাতিয়ে নিতে পারে গাড়ি। এই ব্যাপারে শহরবাসীকে সতর্ক করছেন কলকাতার সাইবার বিশেষজ্ঞরা। সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত জানান, সাইবার অপরাধী বা ব্যাংক জালিয়াতরা এখন মূলত প্রতারণা করে টাকা তুলছে। কিন্তু পুলিশও সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার ফলে এই ধরনের অপরাধ কমতে শুরু করছে। আগামী দিনে সাইবার অপরাধীরা অপরাধের ধরন পালটাবে। তখন তারা হ্যাক করে গাড়ি চুরি করবে, জেনে যাবে তার মাথার কয়েক কিলোমিটার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। সাইবার বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, দেশে সাইবার অপরাধ ২২০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। সাইবার অপরাধের মোকাবিলায় দশ লক্ষ লোকের প্রয়োজন।
[আরও পড়ুন: দেশের দৈনিক করোনা সংক্রমণ ২২ হাজারের নিচে, একাধিক রাজ্যে আরও শিথিল কোভিডবিধি]
সন্দীপবাবু জানান, কলকাতায় ডিজিটাল ফরেনসিক অবহেলিত। এই বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। কলকাতায় সিআইডি, লালবাজার ও কেন্দ্রীয় ফরেনসিকে হাই টেক ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরি আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের তা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে সল্টলেকে তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরি। এখানে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন তরুণ-তরুণীরা। কলকাতায় ডিজিটাল ফরেনসিকে স্নাতক হওয়ার কোর্সও পড়ানো শুরু হচ্ছে। কর্পোরেট হাউসগুলিতে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত কুইজ হবে, যাতে কর্পোরেট কর্তারাও সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতন হন। রাজ্যের ইনফরমেশন সিকিউরিটি অফিসার সঞ্জয়কুমার দাস জানান, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে দেড় হাজার পুলিশকর্মী ও আধিকারিককে সাইবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞ গুলাব মণ্ডল জানান, আরটিএল এসডিআর ও র্যাস্পবেরি পাই নামে দুই ডিভাইস কিনে হাই টেক গাড়ি চোররা দূর থেকে গাড়ি চুরি করতে পারে। যে ডিজিটাল চাবি দিয়ে গাড়ির দরজার ডিজিটাল লক খোলা হয়, সেই বেতার তরঙ্গ ওই দুই ডিভাইসের সাহায্যে চুরি বা নকল করা সম্ভব। এবার সেই চুরি করা বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে ‘নকল ডিজিটাল চাবি’র সাহায্যে সহজেই খুলতে পারে ডিজিটাল লক। এর পর সেই গাড়ি চুরি করে উধাও হয়ে যেতে পারে দুষ্কৃতী। এখনও পর্যন্ত এই ধরনের অপরাধের অভিযোগ দায়ের না হলেও আগাম সতর্কতার প্রয়োজন। তাই এই ব্যাপারে গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।